বশেফমুবিপ্রবি দিবসে অব্যবস্থাপনা, ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে লাইনে দাঁড় করিয়ে খাবার দেওয়া, বাজে ব্যবহার ও নিম্নমানের খাবার বিতরণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

২৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে খাবার বিতরণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সেখানে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সিএসই বিভাগের শেষ বর্ষ শিক্ষার্থী ওয়াকিল আহমেদ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি সংযুক্ত করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ভার্সিটি লাইফের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো আজ!! 50 মিনিট দাঁড়ায় থেকে আমার ভার্সিটির দেওয়া ত্রাণ গ্রহণ করার প্রিপারেশন নিচ্ছি।’

শায়লা সাদিকা নামের এক শিক্ষার্থী এই পোস্টের কমেন্টে লেখেন, ‘ভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে খাবার নিতে গিয়ে আজকে যে অপমানিত হইছি তা গত ৪ বছররেও হই নাই, নিজের ভার্সিটি, মনে হচ্ছিল ত্রাণ নিতে গেছি।’

MD Younus নামের একটি ফেসবুক আইডি আরেক শিক্ষার্থী ওয়াকিল আহমেদের পোস্টে কমেন্টে লিখেছেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসও দেখি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসও দেখলাম। আজকে পোলাপান নিজ ইউনিভার্সিটির দেওয়া টি-শার্ট পরে ঘোরার কথা। কোন টি-শার্ট নাই, ব্যান্ড (আমন্ত্রিত ভালো কোন শিল্পী) নাই, খাবারের বন্টন ঠিক নাই, একটা মুরগির পিস দেখে মনে হচ্ছে একটা হাফ কেজি মুরগীকে ৮ পিস করছে। আমাদের ইউনিভার্সিটি এত দুর্ভিক্ষে আছে জানা ছিল না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক শিক্ষার্থী “Ew’r Jakir” নামের ফেসবুক আইডি একটি স্ট্যাটাসে লেখেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আজকেরটা নিয়ে আমার পাওয়া ৫ম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, অতীতের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসগুলো আর আজকের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মাঝে বিস্তর ব্যবধান,💔 বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৩  স্বরণে থাকবে, এর থেকে Better আয়োজন পেয়েছিলাম অস্থায়ী ক্যম্পাসে থাকাকালীনও। সব কিছুর দিন দিন উন্নয়ন হলেও, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজনের এক নির্মম অবনতি দেখলাম আজ…😪😪😪’

আশরাফুল আজিম নামের ফিশারিজ বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থী মন্তব্য লিখেন ‘কোন একদিন দেখবা সবজি খিচুড়ি খাওয়াইয়া ক্লাসেই ভার্সিটি দিবস পালন করে ফেলবে।’

সানজিদা আক্তার সিমলা নামের আরেক শিক্ষার্থী এই পোস্টের কমেন্টে লিখেন ‘হেনস্তা বললেও ভুল হবে না।’

 এছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একটি করে টি শার্ট ও ক্যাপ পেলেও এবার পাইনি। 

এম একরাম হোসেন নামের শিক্ষার্থী তার স্ট্যাটাসে লেখেন ‘গতকাল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস” ছিলো। নিজের ক্যাম্পাসের এমন দৈন্যদশা দেখব আশা করি নাই। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে এখানে ভর্তি হয়েছি। আমার অধিকার, প্রাপ্য জিনিস নিতে এসে মনে হলো কারো বাবার জমি বিক্রির টাকায় কেনা জিনিস নিতে এসেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের ব্যবহারটা এমন ছিল যেনো খাবারটা তাদের নিজের পকেটের টাকায় কেনা ছিল এবং যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাজেটের অংশ না। এতে খাবারের কোয়ালিটি এতোই নিম্নমানের ছিল যে অনেককেই দেখলাম না খেয়ে ফেলে দিচ্ছে। 

ফেসবুকে এমন ক্ষোভ প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলেন ওয়াকিল আহমেদ বলেন, আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যে ত্রাণ দেওয়ার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের খাবার নিতে হয়েছে। কেউ একটু দেরিতে আসতেই পারে তাতে কি সে খাবার পাবে না! 

তিনি আরও বলেন, ইইই ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষার্থী প্যান্ডেলের ভেতর দিয়ে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল সেই শিক্ষার্থীকে খুবই বাজেভাবে বকাবকি ও ধমকা-ধমকি করেছে। এটা করার অধিকার তাদের নেই। এ খাবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাচ্ছি কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে নয়। তাহলে কেন তারা এমন করল? ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সবচেয়ে বাজে ছিল। তাদের ব্যবহারটা আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে জানতে গিয়ে দেড় ঘন্টা উপাচার্য দপ্তরে বসে থেকেও তার দেখা পাওয়া যায়নি।