গ্লোবাল সাউথ সামিটে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ সুপারিশ

গ্লোবাল সাউথ এবং বিশ্বের উন্নতির জন্য বিশ্বনেতাদের পাঁচটি সুপারিশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভারত আয়োজিত দ্বিতীয় ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৩ এ ভাষণ দেন তিনি। সে সময় এই সুপারিশগুলো প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ব অসহনীয় দারিদ্র্য, অনাকাঙ্ক্ষিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর হুমকিতে জর্জরিত। এই সংকটময় সময়ে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ‘সবার প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের জন্য ‘সবার আস্থা’ জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ তার খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন অর্জনে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথ এবং বিশ্বের উন্নতির জন্য পাঁচটি সুপারিশ প্রদান করেন। সেগুলো হলো:

১. মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্য বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সমুন্নত রাখা অত্যাবশ্যক। গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট বজায় রাখতে হবে।

২. একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।

৩. বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সবার সচেষ্ট হতে হবে।

৪. প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গ্লোবাল সাউথের উচিৎ সবার উন্নত জীবন প্রদান এবং আয়োজক ও স্বদেশ উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে সহজতর করা।

৫. কোভিড-১৯ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাতের ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।  স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্র্যাজুয়েশনের পরেও যথাযথ সময়ের জন্য শুল্ক, কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা।

সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনে চলমান সংঘাতের অবসানের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়।’

তিনি বলেন, ‘আমি নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক অস্তিত্বের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমাদের সবার এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসানের দাবি জানানোর সময় এসেছে। মূলত জাতিগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব, ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে গণহত্যার দিকে পরিচালিত করেছে।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘এই সংঘাতগুলো যুদ্ধরত দেশ এবং জড়িত আন্তর্জাতিক অংশের মধ্যে সত্যিকারের বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা তৈরি করার জরুরি প্রয়োজনের আহ্বান জানায়।’

পরিশেষে, তিনি বৈশ্বিক মানব উন্নয়নে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অংশীজনদের আরো উন্নত ভবিষ্যতের জন্য গ্লোবাল সাউথকে উদারভাবে সমর্থন করার আহ্বান জানাই।’

ভারত শুক্রবার ভার্চুয়াল ফরম্যাটে সেকেন্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের আয়োজন করছে, যা এই বছরের জানুয়ারির পর দ্বিতীয়বার হচ্ছে। ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘দ্বিতীয় ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৩’ আহ্বান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।