কিউই ঝড়ে নড়বড়ে বৃটিশ সাম্রাজ্য

২০১৯ সালে আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেই নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। এবারের বিশ্বকাপে গত আসরের চ্যাম্পিয়নদের তারা পেয়ে গেলো প্রথম ম্যাচেই। হয়তো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের দুঃখ ভুলতেই ইংলিশদের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য মাত্র ৩৬.২ ওভারে তাড়া করে নিলো মধুর প্রতিশোধ।

উদ্বোধনী ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ২৮২ পায় ইংলিশরা। কন্ডিশন বিবেচনায় এই পুঁজি ম্যাচের কোন পর্যায়েই যথেষ্ট বলে মনে হয়নি। তবে ইংলিশ বোলারদের এভাবে শাসন করবে কিউইরা এটাও হয়তো কেউ কল্পনা করেনি।

২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারালেও ইংলিশ বোলারদের আর পাত্তাই দেয়নি নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। রাচিন রবীন্দ্র ও ডেভন কনওয়ের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৮২ বল এবং ৯ উইকেট হাতে রেখে বিশাল ব্যবধানে জয় পায় কিউইরা। ৮৩ বলে সেঞ্চুরি করেন কনওয়ে। তিন অংক ছুঁতে এক বল কম লাগে রাচিন রাবিন্দ্রর, যা বিশ্বকাপে কিউই কোনও ব্যাটারের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২১১ বলে ২৭৪ রানের বিধ্বংসী জুটিতে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন দুজন। ৯৬ বলে ১১ চার আর ৫ ছক্কায় ১২৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাবিন্দ্র। ১২১ বলে ১৫২ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে ১৯টি চার আর ৩টি ছক্কা হাঁকান কনওয়ে।

এর আগে টস হেরে কিউইদের কাছ থেকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় ইংল্যান্ড। ইংলিশদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। ম্যাচের শুরুতে দেখে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার। প্রথম পাঁচ ওভার নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিয়েছেন দুজন।

ম্যাচের অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে ম্যাট হেনরির বলে সাজঘরে ফেরেন ডেভিড মালান। আউট হওয়ার আগে ১৪ রান করেন তিনি। পরে ক্রিজে আসেন জো রুট। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বেয়ারস্টো। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পর স্যান্টনারের বলে ড্যারিল মিচেলের তালুবন্দি হন জনি। তার বিদায়ে উইকেটে এসেই মাঠের চারপাশ থেকে রান তুলতে থাকেন হ্যারি ব্রুক। কিন্তু রাবিন রবীন্দ্রর ঘূর্ণিতে পুল করতে গিয়ে ডেভন কনওয়ের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এর পরপরই গ্লেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হয়ে মঈন আলীর বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে ইংলিশরা। তবে এর উইকেটে এসে জো রুটের সাথে হাল ধরেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। পরে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আসরের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছে ডানহাতি জো রুট। ম্যাচের ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে নিজের অর্ধ শতক পূর্ণ করেন তিনি।

এরপরই উইকেটে থিতু হওয়া বাটলার ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। ম্যাট হেনরির বলে লাথামের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৪৩ রান করেন ইংলিশ দলপতি। পরে উইকেটে আসেন লিয়াম লিভিংস্টোন। কিন্তু ২০ রানে তিনিও সাজঘরে ফিরে যান। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন স্যাম কুরান। ম্যাচের ৪২তম ওভারের প্রথম বলেই রুটকে বোল্ড করেন ফিলিপস। আউট হওয়ার আগে ৭৭ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংলিশ বাহিনী। দলের হাল ধরতে উইকেটে এলেও দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন ক্রিস ওকস (১১)। এর পরপরই লাথামের তালুবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন স্যাম কুরানও (১৪)। তার বিদায়ে ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কিউইরা। শেষ মুহূর্তে মার্ক উড এবং আদিল রশিদ জুটিতে ২৮২ রানের সংগ্রহ পায় ইংলিশরা।

এদিন তিন উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ শিকারি ম্যাট হেনরি। এছাড়াও মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস দুটি করে উইকেট পেয়েছেন। ১১ চার ৫ ছয়ে গড়া ৯৬ বলে অপরাজিত ১২৩ রানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রাচিন রবীন্দ্র।