বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, যারা ছাত্র রাজনীতি করবে, তারা হবে সবচেয়ে সৎ, সাহসী এবং মেধাবী। তারা ছাত্র সমাজের কাছে আইকন হিসেবে থাকবে। কিন্তু আমরা অনেক সময় পত্র-পত্রিকা খুললে দেখি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িতদের সিট বাণিজ্য এবং প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার খবর। অনেকে আবার অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। আমরা কোনও অবস্থাতেই এগুলো প্রত্যাশা করিনা। বরং এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজ।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করে সাদ্দাম হোসেন এসব কথা বলেন।
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের এক রুমে অনেক সময় ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকেও থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের এই সংকটকে পুঁজি করে রাজনীতি করা আমাদের কাজ নয়। তাদের সমস্যার সমাধান করাই আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা যেন স্বস্তি ও নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারে, হলগুলো যেন একটি সুন্দর বাগানের মত আমাদের শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে পারে, সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি সেই দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি। কোনও রাজাকারের উত্তরসূরী যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার অধিকার না পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, এই ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র রাজনীতির সিলেবাসে নতুনত্ব আনার বিষয়ে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে র্যাংকিংয়ের প্রথদিকে স্থান করে নিতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগকে চেষ্টা করতে হবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন রিসার্চ ইউভার্সিটিতে পরিণত হয়। গবেষণার মান ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখার পাশাপাশি জ্ঞান উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে, সেরকম বিষয়গুলো রাজনীতির সিলেবাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতির সিলেবাসের মধ্যে শুধু মিছিল-মিটিং নয়, আধুনিকতা ও নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা যা কিছু চিন্তাভাবনা করছে, সেগুলোকেও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্মেলন মানেই সংগঠনে নতুন রক্তের সঞ্চালন, নতুন রোডম্যাপ, রক্তে শিহরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে স্পন্দিত হওয়া, শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই-সংগ্রামে আগুয়ান থাকার রক্ত-শপথ গ্রহণ করা এবং ছাত্রলীগকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। আমি আশা করি, রাবি শাখা ছাত্রলীগ তাদের লড়াই, সংগ্রাম ও রক্ত ঝরানোর ঐতিহ্য ধরে রাখবে এবং সারাদেশের মধ্যে একটি আইকনিক শাখা হবে। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা এই শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিত্ব, সততা, সাহস, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ও সৃজনশীলতা দেখে ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন। রাবি ছাত্রলীগ যেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান বক্তা ছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও রাজশাহী-৬ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ মো. আয়েন উদ্দীনের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি।
সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারি, উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন রনি এবং সহ-সম্পাদক আদনান হোসেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাবি ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের দুইদিন পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি এবং ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে তিনজন সহ-সভাপতি, চারজন যুগ্ম-সম্পাদক ও চারজন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় ছয় মাস পর ২০১৭ সালের ১৮ জুন ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।