বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে সরকার দেশে ‘জঙ্গি নাটক’ করছে বলে বিএনপি মহাসচিব যে মন্তব্য করেছেন তার সমালোচনা করেছেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য হাস্যকর ও নির্লজ্জ।’
আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছেন তা দেখে দেশের বিবেকবান মানুষ লজ্জা পেয়েছে! বিএনপি মহাসচিবের দেওয়া ‘ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে সরকার দেশে জঙ্গি নাটক করছে―এই বক্তব্য দেশবাসীর সঙ্গে বিএনপির চরম উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।
বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য’ হয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কুখ্যাত জঙ্গি নেতা শায়েখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের তাণ্ডবে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের কাছে জঙ্গি দমনের প্রচেষ্টাকে নাটক মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ বিএনপির মদদেই পরিচালিত হচ্ছে জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেটওয়ার্ক। বিএনপির সহায়তা, প্রত্যক্ষ মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে।’
কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা বলেছিল ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি’। অথচ পরবর্তী সময়ে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও প্রমাণিত হয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তৎকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিকাশ ঘটেছিল।”
তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিল বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি বাহিনী। জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে বিএনপির তৎকালীন মন্ত্রী, এমপিদের প্রকাশ্য বৈঠকের ছবি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “জিয়াউর রহমানের পত্নী খালেদা জিয়ার শাসনামলে জঙ্গিবাদ ব্যাপক বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে এক মহীরুহে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রশিদ-ফারুকরা মধ্যপ্রাচ্যের উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহযোগিতায় ‘ফ্রিডম পার্টি’ নামে একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠন গড়ে তোলে এবং বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনে ‘ফ্রিডম পার্টি’কে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বিএনপির শাসনামলে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে।
এই অপশক্তি যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছে ও হেলিপ্যাডে বোমা পুঁতে রাখা, রমনার বটমূলে হামলা, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে গির্জায় হামলা ও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলাসহ একাধিক জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল।’
বিবৃতিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ একাধিক জঙ্গি নেতার আদালতে দেওয়া জবানবন্দি এবং সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় তারেক রহমানই ছিল এই গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড। এ ঘটনায় নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন। বিএনপি, জামায়াত, বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র, দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্রেই এই হামলা পরিচালিত হয়।
২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের হামলা থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীও রেহাই পাননি। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জেএমবি ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬টি হামলা চালায়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা, ময়মনসিংহে মাজার ও ময়মনসিংহের তিনটি সিনেমা হলে বোমা হামলা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে ১৭ আগস্টের পর অসংখ্য আত্মঘাতী হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন। আহত হয় চার শতাধিক। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।’
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক ও বাহক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়েছে এবং উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল।’
স্বাধীনতাবিরোধী এবং উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্বারা আওয়ামী লীগ বারবার আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী এই উগ্র-সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় নিহত হয়েছে। আজকে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও শান্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সে সময়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে সেই উসকানিরই প্রতিফলন ঘটেছে।’