সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে সাড়া দিতে শুরু করেছেন নাগরিকরা। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের মানুষকে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য সরকারের সর্বজনীন এই কর্মসূচি চালুর প্রথম দিনই ভালো সাড়া মিলেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিমে ৭০০ জন নিবন্ধন করে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও আট হাজারের বেশি গ্রাহক নিবন্ধনের আবেদন পাঠিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার গণবভন থেকে এ কর্মসূচির চারটি স্কিমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ‘প্রবাস’ স্কিমটি প্রবাসীদের জন্য। ‘প্রগতি’ স্কিম চালু করা হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য রয়েছে ‘সুরক্ষা’। আর ‘সমতা’ স্কিমটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। ১৮ বছরের বেশি দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান জানান, প্রথম দিন বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। অনেকেই ইতোমধ্যে নিবন্ধন করার টাকা জমা দিয়ে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করছেন। আবার অনেকে শুধু নিবন্ধন করে রেখেছেন। আশা করি নির্ধারিত সময়ে তারাও টাকা জমা দেবেন। জনগণের এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সরকারের এ মহতী উদ্যোগকে সামনে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় রয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে। এ কারণে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, কোনও বৈদেশিক সাহায্য ও কারিগরি সহায়তা ছাড়াই এ ধরনের একটি বড় কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা জমা শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে দেশ বিদেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভালো সাড়া পড়েছে।
পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন গ্রাহক। গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ৭৫ বছর বয়স হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন তুলতে পারবেন। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও বিশেষ বিবেচনায় পেনশনভুক্ত হতে পারবেন। তবে আজীবন বা ন্যূনতম ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পেতে কমপক্ষে একাধারে ১০ বছর নির্দিষ্ট হারে চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যেসব প্রবাসীর বাংলাদেশের এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা যাবে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এ কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে শিগগির মোবাইল অ্যাপস চালু করবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য আরও দুটি স্কিম:
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপাতত চার স্কিম শুরু হলেও আগামীতে আরও দুটি স্কিম চালু হবে। এ বিষয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আরও দুটি স্কিম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে তাদের পেনশন দেয় সরকার। তাই এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলমান চারটি স্কিম পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং সফলতার ভিত্তিতে ওই দুটি স্কিম চূড়ান্ত করা হবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এ স্কিম দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০৩১ সালের শুরুতে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করবেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে। তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত স্কিমে পেনশন পাবেন। এ ছাড়া এর আগ পর্যন্ত সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা প্রচলিত নিয়মেই পেনশন পাবেন।