রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের সাতজন শিক্ষক, একজন গবেষক ও ২২৬ জন শিক্ষার্থীকে ‘ডিনস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদ গ্যালরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ডিনস্ এ্যাওয়ার্ড ২০২২ ও ২০২৩ এবং বিএসসি ও এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ডিনস্ এ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রদান করা হয়।
এরমধ্যে ২০২২ সালের জন্য চারজন শিক্ষক, ২০২৩ সালের দুজন শিক্ষক ও একজন পিএইচডি গবেষককে ডিনস্ এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবং মানসম্পন্ন বই প্রকাশনার স্বীকৃতিস্বরূপ আরেকজন শিক্ষকে বিশেষ ডিনস্ এ্যাওয়ার্ড ২০২২ প্রদান করা হয়। এছাড়া ডিনস্ লিস্টে অন্তর্ভূক্ত এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৭২ জন ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৫৪ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা।
২০২২ সালের এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খাইরুল ইসলাম, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব উৎপলানন্দ চৌধুরী এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব শেখ খালেদ মোস্তাক। এছাড়াও ২০২২ সালের বিশেষ ডিনস্ এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহীম হোসেন মন্ডল।
২০২৩ সালের এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহীম হোসেন মন্ডল এবং ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মির্জা হুমায়ূন কবীর রুবেল। এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পিএইচডি গবেষক ড. মো. জহিরুল ইসলাম এ্যাওয়ার্ড পান।
এই অনুষদের ডিনস্ লিস্টে অন্তর্ভূক্ত ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২৮ জন এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২৪ জন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছয়জন এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২০ জন, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১১ জন এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৪২ জন, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর নয়জন এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ২৯ জন, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৮ জন এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৩৫ জন এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর চারজন।
অনুষ্ঠানে অত্র অনুষদের সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সাহিদুর রহমান, প্রফেসর ড. সি এম মোস্তফা এবং প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগম-কে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও প্রফেসর ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবায়দুর রহমান প্রামানিক উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবু জাফর মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ মূলত গবেষণাকেন্দ্রিক। এখানে আসলে উন্নতমানের ল্যাবরেটরিজ সুবিধা না থাকলে সমস্যা হয়, সেটা আমরাও বুঝি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইনগত এবং আমলাতান্ত্রিক অনেক সমস্যা রয়েছে। এজন্য আমরা ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু করতে পারিনা। আমার নিজেরও ইচ্ছা হয় একটা উন্নতমানের ল্যাব করবো। কিন্তু নানা রকম জটিলতার কারণে আমরা করতে পারছিনা। তারপরও আজকের বক্তাদের আবেদন ও নির্দেশনাগুলো আমরা খেয়ালে রাখবো।
তিনি আরও বলেন, প্রকৌশল অনুষদ আজকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত মানুষ চিহ্নিত করে দিলো। প্রদানকৃত সার্টিফিকেটে হয়তো নেতৃত্ব দেওয়ার কথা লেখা নাই, কিন্তু পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিজ দায়িত্বে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সকলকে সাথে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যেতে হবে। সোনার বাংলা গড়ার আগে আমাদের নিজেদেরকে আগে সোনার মানুষ হতে হবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল- ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে পূর্বের আলোচকরা আক্ষেপ করেছেন। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে গবেষণাপত্র প্রকাশনার তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি তারা অন্যান্য আরও যাকিছু চাই, সেগুলোও দিতে হবে। তাহলে, আমাদের র্যাংকিং আরও ভালো হবে বলে আমরা আশা করি।
গবেষণার জন্য টাকার বিষয়ে উপ-উপাচার্য বলেন, কয়েকবছর আগেও আমাদের গবেষণার জন্য টাকার অভাব ছিল। এখন গবেষণার জন্য টাকা আছে, কিন্তু সেটা নেওয়ার মত শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছেনা। বছর শেষে টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। আমাদের ভালো শিক্ষক নেই এমননা, ভালো শিক্ষক আছে, কিন্তু গবেষণায় অনেকের আগ্রহ কম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষাণ ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ ও স্কলারশিপের দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এবছর কিছু কিছু স্কলারশিপ ও অনুদান আমরা নিতে পারিনি, কারণ আমাদের কারো আবেদনই ছিল না। ইউজিসি ইনোভেটিভ রিসার্চ প্রজেক্টের জন্য প্রোপোজাল চেয়েছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনও আমরা দিতে পারিনি।