দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে

টানা দুই বছর করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করে কেটেছে মানুষের। সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে চরম সঙ্কটে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আমুল প্রভাব ফেলা এ যুদ্ধ সবচাইতে বেশি প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জীবনযাত্রায়।

চিকিৎসা, বাসস্থান, বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে ব্যয় কমিয়ে ফেলেছে দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ। করোনাভাইরাস কিংবা চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়েও দেশে এখন ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের, মধ্যবিত্তরাও ভালো নেই।

ঈদ পরবর্তী বাজারে কাঁচা মরিচের অতিরিক্ত দামে নাজেহাল হচ্ছেন খুচরা পর্যায়ের ক্রেতারা। ভারত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মরিচ আমদানি করা হলেও এখনও ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। 

ভোক্তা অধিদপ্তরের নজরদারির তোয়াক্কা না করেই এখনও অস্থিতিশীল রয়েছে কাঁচা মরিচের দাম। অপরদিকে ৪০ টাকা দরের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এছাড়া গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর মিরপুর, মহাখালী, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে মুহূর্ত নিউজ এসব তথ্য পেয়েছে। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পণ্যের দামই গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া আদা এ সপ্তাহে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ৬০ টাকা দরের লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। ১২০ টাকা কেজি দরের ছোট সাইজের রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। তবে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বড় সাইজের রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে৷ 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি মানের প্রতিটি চাল কুমড়া ৫০ টাকায়, মাঝারি মানের ফুলকপি ৫০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকায় ও মূলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। 

এদিকে ফার্মের মুরগির লাল ডিম ১৪৫ টাকা ডজন, কিছুটা আকারে ছোট ডিম ১৪০ টাকা ডজন। গত সপ্তাহে সাইজভেদে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ডিম। এছাড়া গত সপ্তাহে ফার্মের সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কিছুটা কমে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারে ছোট চিংড়ি গত সপ্তাহে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। 

আকার ও মানভেদে পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে। তবে গত সপ্তাহে ৩০০ টাকা কেজি দরে এসব মাছ পাওয়া গেছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। মাঝারি মানের পাঙ্গাস বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গরুর মাংস আগের মতোই ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আলী আজমের সাথে কথা হয় মুহূর্ত নিউজের। তিনি বলেন, সবকিছুতেই অতিরিক্ত দাম। বাজার করতে আসার আগে যে পরিকল্পনা থাকে বাজারে এসে তা ভেস্তে যায়। লিস্ট লম্বা থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেক হিসাব করে পরিমাণে কম নিয়ে বাজার করতে হচ্ছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তি। সরকার বোতলজাত গ্যাসের দাম কমালেও আমি গতকাল ১২০০ টাকাতে কিনেছি। এই কাঁচা বাজারেও একই অবস্থা। ৩৫০ টাকা এখনো মরিচের দাম। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। 

ফয়সাল আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এলেই ঘাম ছুটে যায়। সবকিছু কিনতে পারি না। সব জিনিসের অতিরিক্ত দাম। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমার বেতন তো বাড়েনি। মাংসের যে দাম তাতে আমার মতো মানুষের মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা। কিছুই বলার নেই। দাম বাড়ে আর আমরা কিনে খাই। এভাবেই চলছে। কিছুই ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই।  

কাঁচা মরিচ বিক্রেতা ফারুক বলেন, পাইকারি বাজারে আমরা অতিরিক্ত দামে মরিচ কিনে এনেছি। ৩২০ টাকায় মরিচ কিনতে হলে ভাড়া এবং সব খরচ মিলে ৩৫০ টাকায় বিক্রি তো হবেই। কখনও কখনও লোকসান হলেও আমরা ৩০০ টাকায় মরিচ বিক্রি করছি। দাম বাড়লে আমাদের সাথে কথা বলে লাভ নেই। আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটেই সব হয়। 

পেঁয়াজ বিক্রেতা আলী নুর মিয়া মুহূর্ত নিউজকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি। খোলা বাজারে এমন হবেই। দাম বাড়বে-কমবে। তবে পেঁয়াজের দাম কিছুদিন ধরেই বেশি চলছে। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। আমাদের কিছুই করার নেই।  

তবে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, সে জন্য নিত্যপণ্যের দাম যেমন স্থিতিশীল রাখতে হবে। তেমনি তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর সরকারের পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে, সেদিকে তাকিয়ে আছে সাধারণ জনগণ।

leave a reply