ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ চারজন হলেন জাহাজের সুপারভাইজার চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান (৪৮), চালক চাঁদপুরের রুহুল আমিন (৫৫), কর্মী হবিগঞ্জের মাদবপুর উপজেলার সমুজদিপুর গ্রামের আবদুস সালাম ওরফে হৃদয় (২৬) ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের আকরাম হোসেন (৪০)।
এদিকে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ চার কর্মচারীকে শনিবার রাতেই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসএইচআর নেভিগেশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হুমায়ুন কবির বলেন, অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার মালিকপক্ষ বহন করছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সুগন্ধা নদীতে আজকে সারা দিন অনুসন্ধান চালাবে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চালানো হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।
রোববার সকাল পর্যন্ত দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে মজুত করা প্রায় ১১ লাখ লিটার তেল থেকে প্রায় চার লাখ লিটার তেল ‘ওটি মৃদুলা’ নামের অপর একটি জাহাজে অপসারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ডুবে যাওয়া তেলবোঝাই জাহাজটি অনেকটা ভেসে উঠেছে। উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুটি জাহাজ।
কোস্টগার্ডের সদস্য রিয়াজুল ইসলাম বলেন, নদীতে যাতে তেল ছড়িয়ে জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য অত্যাধুনিক তেল অপসারণকারী ল্যামোর সংযুক্ত বোট দিয়ে কাজ করছেন তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি জাহাজে ছিলেন৷ দুর্ঘটনার আগে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য সুগন্ধা নদীর তীরের একটি মসজিদে যান তিনি। ফিরে এসে দেখেন জাহাজে আগুন লেগেছে। তিনি জানান, নিখোঁজ চারজনই ইঞ্জিন রুমের ওপর তলার কেবিন ও চালকের রুমে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে ইঞ্জিন রুম বিস্ফোরিত হলে কেবিনসহ ওপরের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে নদীতে ছিটকে পড়ে। তাদের কী হয়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না।
বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, দগ্ধ চারজন নদীতে ঝাঁপ দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। দগ্ধ চারজন হলেন পাবনার শাকিল (৩৫), চাঁদপুরের ফরিদুল আলম (৫৩), পিরোজপুরের ইকবাল হোসেন (২৭) ও বরিশাল বাকেরগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মাইনুল ইসলাম (২৯)।
নিখোঁজদের স্বজনেরা শনিবার রাত থেকেই সুগন্ধা নদীর পাড়ে অপেক্ষায় আছেন। নিখোঁজ আকরাম হোসেনের ভাতিজা মো. কাইয়ুম জানান, পৌর খেয়াঘাট এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান করে তার চাচার খোঁজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাচা জাহাজে তেল ভর্তি থাকায় ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারেননি। চাচার কী হয়েছে, সেই চিন্তায় বাড়িতে সবাই উৎকণ্ঠায় আছেন।’
রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন রুম বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে তেল অপসারণে ব্যস্ত কর্মীরা। পুলিশের একটি দল সেখানে আছে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা তেল যাতে নদীতে ছড়াতে না পারে, সে জন্য কাজ করছেন।
শনিবার বেলা দুইটার দিকে সুগন্ধা নদী তীরের সাগর নন্দিনী-২ নামের জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহ আগে তেলবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে এসে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। জাহাজটিতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল ও ডিজেল) ছিল। এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে খালাস করার অপেক্ষায় ছিল। ঈদুল আজহার ছুটিতে ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা সম্ভব হয়নি।
এর আগেও ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুনে দগ্ধ হয়ে সাতজন মারা গিয়েছিল।