আগামী ১৩ই মে বিকেল পাঁচটায় সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওমর ফারুকের মা’ এর প্রদর্শনী হবে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে। একইসাথে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে চলচ্চিত্রটি সংরক্ষণের জন্য হস্তান্তর করা হবে।
প্রদর্শনীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিখ্যাত জাদু শিল্পী, শহীদ ওমর ফারুকের বাল্যবন্ধু জুয়েল আইচ, অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ হাবিবুর রহমান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফারুক আহমেদ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন এবং একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু।
সিনেমাটির পরিচালক ও প্রযোজক এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, “ওমর ফারুকের মা’ সুন্দর চলচ্চিত্রটি মানুষ দেখবে, মুক্তিযুদ্ধের আর একটি টুকরো চিত্র সম্পর্কে জানতে পারবে। চলচ্চিত্রটির বাণিজ্যিক কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই।”
তিনি আরও বলেন, ‘ওমর ফারুকের মা’ সিনেমাটি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এই প্রচারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যাতে আরো তথ্য পেতে পারে, দেশকে ভালোবাসতে পারে সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। আগামী বিজয় দিবসে সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী হবে। ইতোমধ্যে গেল বছরের ১৭ই ডিসেম্বর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার/ শুভমুক্তি হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘ওমর ফারুকের মা’ চলচ্চিত্রটি বিনামূল্যে গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বরে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রেক্ষাগৃহগুলো, মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে চলচ্চিত্রটি বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মাঝে জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। চলতি বছরের ৭ই মার্চ চলচ্চিত্রটি মেক্সিকোর বাংলাদেশ এম্বাসি’র আয়োজনে প্রদর্শিত হয়।
পরিচালক বিপ্লব আরও জানান, গল্পটি পিরোজপুরের জেলার আমড়াঝুড়ির কাউখালী উপজেলার আশোয়া আমড়াঝুড়ির একজন মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক আর তার মায়ের। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ‘ওমর ফারুকের মা’ হিসেবে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান। তাছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করছেন বন্যা মির্জা,সাহেদ শরীফ খান, খাইরুল আলম সবুজ, নাজনীন হাসান চুমকি, সালমা রহমান, আইনুন পুতুল, রিপন চৌধুরী, কাজী রাজু, সৈয়দ শুভ্র, মুকুল সিরাজ, এ বি এম মোতাহারুল ইসলাম, প্রণব ঘোষ, রোশেন শরিফ ও তুহিন আহমেদসহ আরও অনেকে।
যেভালে এলো ওমর ফারুকের মা চলচ্চিত্র
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে ‘ওমর ফারুকের মা’ সিনেমার চিত্রায়ন করা হয়েছে। একাত্তর সালে ২১ বছরের যুবক ওমর ফারুক ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। ওমর ফারুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভিক যোদ্ধা। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ পিরোজপুরের টাউন ক্লাব চত্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ওমর ফারুক, পুড়িয়ে ফেলেন শহরের সবগুলো পাকিস্তানি পতাকা।
এক সন্ধ্যায় অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পিরোজপুরের ট্রেজারি ভেঙে লুট করেন অস্ত্র। আত্মগোপনে থেকে সুসংগঠিত করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধের সময় এক রাতে মাকে কথা দিয়েছিলেন রাতে ফিরে মায়ের হাতে ভাত খাবে। কিন্তু তাঁর ফেরা হয়নি। সেই রাতে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন ফারুক। ধরা পড়ার সময় তার কাছে স্বাধীন বাংলাদেশের সাতটি পতাকা পায় পাক সেনারা। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় তার। একটি পতাকা মাথায় হাতুড়ি পেটা করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তার, শহীদ হয় ওমর ফারুকের মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয় কীর্তনখোলা নদীতে।
৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে, শেষ হয়নি ওমর ফারুকের মায়ের অপেক্ষা! মা আজও ছেলের অপেক্ষায় তিনবেলা হাড়িতে ভাত বসান, রাতে সদর দরজা খোলা রাখেন ছেলের অপেক্ষায়, ছেলে আসবে সেই বিশ্বাসে।