ছোটবেলায় একদিন বাবা বলেছিলেন, কুয়াকাটায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখা যায়। তখন থেকেই আমার মনে কৌতুহল জেগেছে প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করার। বেশ কয়েকবার বাবার কাছে আবদারও করেছিলাম যেন আমাকে কুয়াকাটায় ঘুরতে নিয়ে যায়। বাবাও আমাকে বলেছিলেন আগে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট কর তারপর তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব।
তখনকার সেই অপেক্ষা যেন আর দীর্ঘ হয়ে গেল। কৈশোর থেকে এখন তারুণ্যে পৌঁছেছি। স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা দিয়েছি। ভাগ্য আমাকে নিয়ে এসেছে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে আমার স্বপ্নের স্থান সাগরকন্যার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ক্যাম্পাসে আসার কিছুদিন পরই সুযোগ হয় কুয়াকাটা যাওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পথ দুই ঘন্টা বাসে ভ্রমণের পর যখন কুয়াকাটায় পৌঁছলাম তখন আমি যেন আরও অধির হয়ে উঠলাম। হোটেল রুমে প্রস্তুতি সেরে গেলাম সাগর পাড়ে। সাগরের উত্তাল ঢেউ আর অবিরাম বাতাস যেন আমায় হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। সমুদ্রের বালুভূমিতে পা ভেজালেই বুঝা যায় এ এক অন্য অনুভূতি।
কুয়াকাটায় শুধু যে সি বিচ তা নয়, এখানে আছে ম্যানগ্রোভ ফাতরার বন যা টেংরাগিরির বন নামেও পরিচিত। মূল সমুদ্র সৈকত থেকে ছোট ট্রলারে করে যাওয়ার পথে দেখেছিলাম ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। বনের ভেতরে দুই ধারে গাছপালা, কিছু বন্যপ্রাণী, সাথে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে সরু খাল বেয়ে চলা এক অন্য রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
তবে রোমাঞ্চের শুরুটা হয় ভোর বেলা সূর্যোদয়ের মনোমুদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার মাধ্যমে। এ দৃশ্য উপভোগ করার জন্য যেতে হয় মূল সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে, গঙ্গামতির চর পেরিয়ে কাউয়ার চরে। সূর্য বড় আকারে রক্তজবার রঙে সাগর থেকে উদিত হয়। অনেক দর্শনার্থীদের ভীড়ে আমিও সেই সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেছি।
তবে দিনের শেষে মূল সমুদ্র সৈকত থেকেই সূর্যাস্ত দেখা যায়। পরিস্কার আকাশে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে। অন্তিমের লাল আলো সাগরে পড়ে ঢেউয়ের সাথে যেন রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। সেই সাথে সাথে সূর্য সাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সূর্যাস্ত দেখার সেই মূহূর্ত যেন এক অনন্য অনুভূতি। সূর্যাস্তের পর সাগরের তীরের উত্তাল দখিণা হাওয়া আর ঢেউয়ের তীব্র গর্জন আমার প্রাণ জুরিয়ে মনকে প্রশান্ত করে দেয়।
এছাড়াও কুয়াকাটায় ঐতিহ্যবাহী রাখাইনদের খননকৃত কুয়া, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পল্লী, শুটকী পল্লী, লাল কাঁকড়ার চর, লেবুর চর ও তিন নদীর মোহনা দর্শনীয় স্থানগুলোর অপরূপ সৌন্দর্য আমাকে বিস্মিত করেছে।
আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
