বগুড়ায় হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বগুড়ার আদমদীঘির নসরতপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের ছেলে আমিরুল সরদার হত্যা মামলার আসামি তহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দুপুরে তহিদুলকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
তবে মামলার প্রধান আসামি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলমকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরে ‘র‌্যাব ১১ ও ১২’ এর টিম অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি তহিদুল ইসলামকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। পরে র‌্যাব তাকে থানা পুলিশে জমা দেন। তহিদুল লক্ষীপুর গ্রামের মৃত ইসমাইলের ছেলে।

নিহত আমিরুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, ‘২২ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় মামলার প্রধান আসামি শাহীন মোবাইল ফোনে লক্ষ্মীপুর গ্রামের ক্লাবে আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় জানাতে পারি শাহীন ও তহিদুলের নেতৃত্বে মহসীন, আরিফ, সালাম, মামুন, জুয়েল, বকুল ও সাগরসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দৌড়ে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পাই। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় আমার ছেলেকে।’

জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পরের দিন দুপুরে আমিরুলের বড় বোন আফরোজা বেগম বাদী হয়ে শাহিন, তহিদুলসহ ৩৭ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর আসামি নুর ইসলাম কবিরাজ, আবু বক্কর ও ওয়াহেদ নামের তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার ২০ দিন পর মামলার আরেক আসামি তহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বাকি আসামিরা এখনও পলাতক রয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দল থেকে শাহীন ও তহিদুলকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক আজাদ জানান, নসরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তহিদুল ইসলাম এবং সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ এবং ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ফলে তাদেরকে পদ হতে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, গ্রামের তুচ্ছ ঘটনায়ও তহিদুল-শাহীন গ্রুপ বিচার সালিশ বসিয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায়সহ বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করেন। যারা জরিমানা দিতে চায় না তাদের গ্রাম ছাড়া করেন। সম্প্রতি এক জমির বেচা-কেনা নিয়ে এই চক্রের হাতে দুই লাখ টাকা আসে। টাকাগুলো তাদের দলনেতা শাহীনের কাছেই ছিল। সে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে লক্ষ্মীপুর গ্রামের ক্লাবে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে আমিরুলের সঙ্গে শাহীন-তহিদুলদের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জেরে বৈঠক শেষেই আমিরুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা জানান, গ্রেপ্তারকৃত তহিদুলকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও তাকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।


leave a reply