শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স পটুয়াখালী জেলা শাখা। সোমবার বিকেলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। এসময় সংগঠনটির জেলা সভাপতি রুবাইয়াত হক ও সাবেক সভাপতি একেএম ইমরান সালেহীনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি শিশু দল উপস্থিত হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে অনুযায়ী ‘মহিলা ও শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে রাষ্ট্রকে কোনো কিছুই বিরত রাখতে পারবে না।’ এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও দায়বদ্ধতাকে সুস্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে এবং শিশু অধিকারকে সম্মান প্রদর্শন করে শিশুদের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নসহ এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন মানের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে বেড়ে উঠছে, যার ফলে শিশুদের জীবন বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত। কোন নির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে অথবা একমুখী পরিকল্পনা দিয়ে শিশুদের জীবনের সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য পরিকল্পনা, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি, কার্যকর বাস্তবায়ন ও সকল ক্ষেত্রে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করার জন্য সর্বক্ষেত্রে সুসমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখানেই শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই নিবেদিত প্রাণ একটি পৃথক শিশু অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি চলে আসে, যার মাধ্যম সুসংগঠিত ও সুসমন্বিত করা হবে শিশুদের জন্য রাষ্ট্রের সকল প্রতিশ্রুতি ও সেগুলোর বাস্তবায়ন।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি। শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে শিশু বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় পৃথক শিশু অধিদপ্তরের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
কিন্তু ২০২০ এর পর এ বিষয়ে সরকারের আর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে সরকারের সহযোগী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিকে পৃথক শিশু অধিদপ্তরের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় একটি কখনও আরেকটির বিকল্প হতে পারে না।
তাই শিশুদেরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিশু বিষয়ক সকল উন্নয়ন, পরিকল্পনা, আইন ও নীতিমালার কার্যকর ও সঠিক বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে একটি পৃথক শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী কাছে আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়াসহ শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে কাজ করার আহ্বান জানান।