এভাবেও ফিরে আসা যায়! ফিরে এলেন ঋষি সুনাক, বসলেন ব্রিটিশ মসনদে! বারাক ওবামার পর কোনো অশ্বেতাঙ্গ বিশ্ব রাজনীতির এমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নিযুক্ত হলেন! অধিকতর যোগ্য হাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হবার প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া ঋষি সুনাকের প্রত্যাবর্তনের পথ এমন মসৃন হলো কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন দেবাশীষ রায়।
নিম্ন কর হার এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্রিটেন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন লিজ ট্রাস! কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হাওয়ায় দায় নিজের কাঁধে নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপরই ঋষি সুনাকের সুযোগ এসে যায় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হবার! অথচ দু’মাসেরও কম সময় আগে প্রধানমন্ত্রী হবার দৌড়ে তাকে থেমে যেতে হয়। থেমে যেতে হয় মূলত: অশ্বেতাঙ্গ বলে। সে সময়ে টোরি পার্টির এমপিরা কম যোগ্য লিজকে নির্বাচিত করেন। এবার ঋষিকে কেন প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হল না? এই প্রশ্নের জবাব আছে ইংল্যান্ডের বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভেতরেই।
কী সেই পরিস্থিতি?
প্রথমত: আগামী নির্বাচনের আগে সময় আছে মাত্র দু’বছরের মতো। এ সময়ের মধ্যে জনমনে স্বস্তি আনা এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে অস্থিরতা কমানোর কাজটা খুব একটা সহজ হবে না।
দ্বিতীয়ত: অর্থনীতির আয় ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে হলে নির্দয়ভাবে সরকারি ব্যয় কমাতে হবে। যেসব খাতে গরীবরা সরকারি সাহায্য পায় সেখানে খরচ কমলে সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে গরীবদের ওপর। যেটা ভীষণভাবে প্রধানমন্ত্রী ও দলের জনপ্রিয়তা কমাবে।
তৃতীয়ত: বরিস জনসনের পতনের পর থেকেই লেবার পার্টি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। একাধিক জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তায় ধ্বসের খবর দিচ্ছে গণমাধ্যমগুলো।
চতুর্থত: টোরি পার্টির ভেতরে যে মাত্রায় বিভক্তি ও কোন্দল আছে তাতে করে পূর্ণ দলীয় সমর্থন নিয়ে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
পঞ্চমত: তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেখান থেকে একটা সহনীয় বাজার পরিস্থিতি তৈরি করাটা খুব কঠিন কাজ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে ২০২৩ সালের শুরুতে মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
ষষ্ঠত: বরিস জনসন অঙ্গীকার করেও সামাজিক সেবা খাতে পরিবর্তন দেখাতে পারেননি। করোনা মহামারির সময় ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা সবাই দেখেছে। লিজ ট্রাস তেমন কোনও কাজ দেখানোর সুযোগই পাননি।
অথচ গত দু’বছরে জীবনযাত্রার ব্যয়, পরিবহন ব্যয় কিংবা বিদ্যুৎ বিল অনেক বেড়েছে, সেভাবে মানুষের আয় বাড়েনি। এতসব প্রতিকূলতা ও ব্যর্থতার সমূহ সম্ভবনা দেখে মূলত কেউ এই পথ মাড়াতে চায়নি। এসব জেনে বুঝে ঋষি সুনাক মসনদে বসেছেন।
অভিবাসী মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঋষি লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন। দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন এমবিএ সনদ। ৩৫ বছর বয়সে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বরিস জনসনের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। করোনাকালীন তার অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাই তাকে দুর্গম ও বিপৎজ্জনক এই পথে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। সরকারি ব্যয় ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা কমানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত ঋষিকে রাজনীতির ময়দানে কতখানি বিপদে ফেলবে আর সেটি মোকাবিলায় তার গৃহীত কৌশলেই নির্ধারিত হবে ঋষি ও টোরি দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কতটা তিনি সফল হবেন সেটা সময় বলে দেবে।