শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী চিকিৎসক না হয়েও ব্যানার পোস্টারে ডাক্তার লিখেছেন। ডাক্তার লেখা নিয়ে এরইমধ্যে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। এ ঘটনায় গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রির্টানিং কর্মকর্তা ও ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনারস প্রতিকের মোজাম্মেল হক খান।
নামের আগে ডাক্তার লেখা ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম আব্দুল জলিল সরদার। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকের হাটি গ্রামের মৃত চান সরদারের ছেলে। নাগেরপাড়া ইউপি নির্বাচনে ‘চশমা’ প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ছিলেন। এর আগেও ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নাগেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
আব্দুল জলিল সরদার বলেন, আমি কোন এমবিবিএস ডাক্তার নই। আমার বড় কোন সার্টিফিকেট নেই। আমি একজন ডাক্তারের সঙ্গে থেকে কাজ করছি। পরে পল্লি চিকিৎসক হয়েছি। জেলা, উপজেলা ও আমাদের এলাকায় আমি ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। আমার ব্যানার পোস্টারে ডাক্তার দেখে বারাবাড়ি করছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা। পোস্টার বাদ দিলেও আমি জলিল ডাক্তার। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলে যখন ডাক্তারি করছি, মানুষকে সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করছি। ওই সেবার কারণেই আমি মেম্বার ও চেয়ারম্যান হয়েছিলাম।
স্থানীয়রা বলছেন, আব্দুল জলিল সরদারের নেই অনুমোদিত ডিগ্রি। তিনি স্নাতক পাশ করলেও চিকিৎস হিসেবে স্বীকৃত কোনো সনদ নেই তার।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে গোসাইরহাট উপজেলার নলমূড়ি, নাগেরপাড়া, সামান্তসার, গোসাইরহাট, কুচাইপট্টি, আলাওলপুর ও কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদে (৭টি ইউপিতে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়নে মোট ভোটার ৯৯ হাজার ১৯৭। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ২১৪ এবং নারী ভোটার ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৮ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২০২ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এদিকে নাগেরপাড়া ইউপিতে মোজাম্মেল হক খান (আনারস), আব্দুল জলিল সরদার (চশমা), মাস্টার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন (হাতপাখা), এনায়েত করিম মিলু মাস্টার (ঘোড়া) প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। প্রার্থীরা মাঠে-ঘাটে অবিরাম প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসার সাথে ইউপিগুলোর বাজার, অলি-গলি, চায়ের দোকান, বিভিন্ন স্থাপনা ও বসত বাড়ির সামনে পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোজাম্মেল হক খান (আনারস) বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জলিল সরদার ডাক্তার না হয়েও ব্যানার, পোস্টারে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তিনি নামের আগে ডাক্তার লিখে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমার দৃষ্টি মতে এটা প্রতারণা। তাই আমি গত ২০ নভেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রির্টানিং কর্মকর্তা ও ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে আমি অবগত নই। আমি এই প্রতারণার বিচার চাই।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। এই পর্যন্ত যতটুকু পেয়েছি তার পেশা ডাক্তার না, অন্য পেশার মানুষ তিনি। আমাদের ভোটার তালিকা ডাটাবেইজে যা উল্লেখ আছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতায়, তাতে ডাক্তার শব্দটা যায় না। তদন্তপূর্বক তাকে শোকজ করব। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply