পবিত্র ঈদুল আযহার শেষ সময়ে রাজশাহীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। সাধ আর সাধ্যের ভিত্তিতে কোরবানির পশু কিনেছেন ক্রেতারা। পশুহাটে ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দর টার্গেটে কোরবানির পশু কিনছেন ক্রেতারা। সেই অনুযায়ী দরদাম করছেন তারা। কেউ কেউ পছন্দের ভিত্তিতে একটু বেশি দামেও কিনছেন কোরবানির পশু। গতকাল রোববার উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পশুহাট সিটি পশুহাটের চিত্র ছিল এমন। সোমবার রাজশাহী নগরীর কাঁটাখালিতেও বসেছে পশুর হাট।
সিটি হাটে গিয়ে কথা হয় ক্রেতাদের সাথে। ক্রেতা আব্দুস সালাম ও মোমিন ইসলাম জানান, অল্প দামে পছন্দের পশু কেনার লক্ষ্য সবার। তারা বলছেন, ২২ হাজার টাকা মণ দরে হলে প্রতিকেজি মাংসের দাম পড়ছে ৫৫০ টাকা। আর ২৪ হাজার টাকা মণ হলে ৬০০ টাকা। তবে কোরবানির পশু দাম নয়, পছন্দে কেনাবেচা হয়। এই হাটে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বরাবরের মতো এবারও বেশি। ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে বেশি গরু কেনা-বেচা হয়েছে।
তবে করোনার মহামারির এই সময়েও হাটে বালাই ছিলনা স্বাস্থ্যবিধির। একটি গরু কিনতে হাটে এসেছেন সাত থেকে ১০ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন হাটে বেড়াতে। তার পরেও বেশিরভাগের মুখে মাস্ক থাকলেও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে চলছে পশু কেনা-বেচা। অন্যদিন হাটের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা গেলেও এদিন সেটিও চোখে পড়েনি। যদিও মাইকের ঘোষণায় মাস্ক পরা ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধির মানার কথা বলা হচ্ছে।
সরেজমিনে পশুহাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর গরু-মহিষ উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, হাটে ছোট-ছোট গরু হলেও এক লাখ টাকা দাম চাচ্ছে বিক্রেতারা। এক লাখের নিচে দাম চাইছেন না তারা। যদিও দর কষাকষিতে কমছে। সেই হিসেবে তুলনামূলক দাম বেশি। তবে বিক্রেতা ও খামারীরা বলছেন এবার দাম কম। এদিন স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও এসেছেন দেশের দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরাও আসেন পশু কিনতে। বিক্রেতারা জানান, হাটে বলদা গরু কেনা-বেচা তুলনামূলক কম। চাহিদা বেশি ষাঁড়ের। হচ্ছে বলে বিক্রিতারা জানান।
হাটে পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রতা আব্দুস রাজ্জাক। তিনি জানান, ‘দুইটি গরু বিক্রি করেছি দুপুরের আগে। দামে হলে এগুলোও বিক্রি করে দেব। না হলে অন্যহাটে তুলবো।’
সিটি হাটে এক লাখ ১৭ হাজার টাকায় গরু কিনে বেশ খুশি বেলাল হোসেন ও তার কোরবানির অংশীদাররা। তারা জানান, গরুটি গায়ের রঙ সবার পছন্দ হওয়ায় তারা এটি কিনেছেন। এছাড়া দামেও কম পেয়েছেন বলে জানান তারা।
আশরাফুল ইসলাম নামের অপর ক্রেতা জানান, ‘সাত ভাগে কোরবানি। আমরা তিনজন এসেছি। এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। আজ হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি।
চট্টগ্রামের লালখানবাজার থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। তিনি ১০টি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘হাটে গরুর দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। যেমন তেমন গরু হলেই লাখ টাকার উপরে দাম হাঁকছেন। আমার কেনা চারটি গরুর প্রত্যেকটি এক লাখ ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে দাম পড়েছে।
কাটাখালীর খামারী আরিফ ইসলাম তিনটি গরু এনেছিলেন। ৯১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার মুখে মাস্ক ছিলনা। তিনি বলেন, ‘দরদাম করতে হচ্ছে। কথা শুনতে পাচ্ছেন না ক্রেতারা। তাই নিচে নামিয়ে রেখেছিলাম। বার বার তোলা নামানোর ফলে ময়লা হয়ে যায়। তাই ফেলে দিয়েছি। যাওয়ার সময় কিনে নেব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। চারটি গরু এনেছেন। তিনি বলেন, ‘গত হাট ভালো হয়নি। ক্রেতা কম ছিল তবে এই হাট জমেছে। তার মধ্যে করোনা। তাই মানুষ ঘুরে না যাওয়ার চেষ্টা করছে। কমবেশি করে হলেও গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এই হাটটি কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে ইজারা নিয়ে চালান। এদের একজন তফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হাটে কেনা-বেচা ভালো হচ্ছে। এবার হাটে সব দেশি গরু।’
Leave a Reply