সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলস্টেশনে ট্রেনের যাত্রীবিরতি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। যার ফলে জেলা শহরের ভাদুঘর এলাকায় বসবাসরত মুচি সম্প্রদায় পথে বসেছে। গত সোমবার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একযোগে চালু হয়েছে ট্রেন চলাচল। দেশের সব রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন যাত্রাবিরতি করলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে কোনো ট্রেন যাত্রাবিরতি করছে না। এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া তিতাস কমিউটার ট্রেনটিও এই স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ভাদুঘর রিশিপাড়ার অর্ধশতাধিক মুচি সম্প্রদায়ের পরিবার অর্থ সংকটে পড়েছে। না খেয়ে দিন পার করছে তারা। তাদের বেঁচে থাকায় এখন কষ্টকর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে প্রতিদিন ২০ জন মুচি জীবিকা-নির্বাহের জন্য কাজ করতেন। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ কারণে স্টেশনটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ফলে তাদের পরিবার এখন আর্থিক অভাব অনটনের মুখে।
মুচিদের কাজের নির্দিষ্ট জায়গার অভাব, সামাজিকভাবে নিম্ন মর্যাদা, লেখাপড়ার সুবিধা না পাওয়া, মজুরি বৈষম্যসহ নানামুখী সমস্যা প্রতিনিয়ত তাদের টিকে থাকা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শ্রী নদ্র লাল বাবু নামের এক মুচি জানান, ‘আমাদের মুচি সম্প্রদায়ের জাতিগত কাজ ও সকল ব্যবসা এমনকি রোজগারের রাস্তা দিনদিন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। কিন্তু স্টেশনে ট্রেনের যাত্রীবিরতি বন্ধ থাকার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বহু কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা। তাদের দিকে তাকানোর মতো কেউ নেই।’
মুচি সম্প্রদায়ের কিরণ চন্দ্র বসু জানান, ‘আমি এই কাজ করে চার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছি । কাজ ভালো হলে দিনে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় রোজগার করতে পারতাম। এ দিয়ে কোন মতো সংসার চালাতে পারতাম।‘
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সোয়েব আহমেদ জানান, সোমবার থেকে দেশে রেলযোগাযোগ শুরু হচ্ছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে পুরাপুরি অকেজো থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে এখানে ট্রেনের যাত্রাবিরতির নির্দেশনা নেই। এই স্টেশনে কন্ট্রোলিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে যারা যাত্রা করতে চান, তারা আখাউড়া, কসবা, আজমপুর, আশুগঞ্জ, তালশহর ও পাঘাচং থেকে যাত্রা করতে পারবেন। তাণ্ডব চালানোর পর স্টেশনের সংস্কার কাজ এখনো শুরু হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন সংস্কার কখন শুরু করা হবে এবং ট্রেন কবে থেকে যাত্রাবিরতি করবে তা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালায়।
Leave a Reply