হাসিনুর রহমান: ক্রীড়াঙ্গনের সফল ফেরিওয়ালা

উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র রাজশাহী শহরে জন্মেছেন অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক যাঁরা ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ নানা ক্ষেত্রে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দেশ বরেণ্য হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন এ সময়ের এক ঝাঁক তরুণ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক। তাদেরই একজন হাসিনুর রহমান টিংকু।

রাজশাহী শহরের কুমারপাড়ার এক ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া পরিবারে টিংকু জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুর রহমান, মাতা: সুফিয়া রহমান। শফিকুর রহমান বাবলু ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তার অগ্রজ তৌফিকুর রহমান লাভলু ছিলেন রাজশাহীর একজন স্বনামধন্য বাস্কেটবল খেলোয়ার এবং দক্ষ অ্যাথলেট।

১৯৭০ সালে তিনি রাজশাহী কলেজে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে অ্যাথলেটিকসে ইনডিভিজুয়াল চ্যাম্পিয়নশীপের বিরল গৌরব অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল টিমকে একাধিকবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার আরেকজন অগ্রজ মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম অলিম্পিকে দৌড়বিদ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

হাসিনুর রহমান টিংকুর অনুজ মাসুদুর রহমান রিংকু ছিলেন একজন উঁচু মানের ক্রিকেটার। শহরের প্রভাতী সংঘ নামক ক্লাবের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে ব্যাটার হিসেবে খেলেছেন। এই লিগে তিনি একাধিক শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন।

একজন ক্রীড়াবিদ টিংকু:
হাসিনুর রহমান টিংকু তার ক্রীড়া প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন কিশোর বয়স থেকেই। তিনি দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভোলানাথ একাডেমির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। অ্যাথলেটিকস এ সামগ্রিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হোন তিনি। রাজশাহী কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দীর্ঘলম্ফে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে রাজশাহী কলেজ একাদশের পক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড আয়োজিত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। রাজশাহী কলেজ সে বছর যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছিল।

২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি অলিম্পিক সলিডারিটি এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি আয়োজিত পাঁচ দিনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সার্টিফিকেট পান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক সলিডারিটি কমিটির একজন সদস্য।

হাসিনুর রহমান টিংকু একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক:
ক্রীড়াঙ্গনে টিংকুর পদচারণা শুরু হয়েছিল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। ২০০৬ সালে তিনি ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ১৮ বছর তার শ্রম এবং মেধায় প্রতিষ্ঠানটিকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৬ সালে রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স (বর্তমান নাম আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল টেনিস কমপ্লেক্স রাজশাহী) এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স এর সহ-সভাপতি-১ এর দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি এই সংস্থার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাসিনুর রহমান টিংকু ২০২১/২২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত অনূর্দ্ধ-১৪ আন্তঃজেলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় রাজশাহী জেলা দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে বছর রাজশাহী জেলা দল রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল।

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্দ্ধ-১৮ বালিকা বিভাগে রাজশাহী বিভাগীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত আন্তঃবিভাগ অনূর্দ্ধ-১৮ বালক দলের ম্যানেজার হিসেবে বিভাগীয় দলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহিলা ক্রিকেট লিগে রাজশাহী দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজশাহী শহরের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন ব্রাইট স্টার ক্লাবের তিনি বর্তমান নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।

তার উৎসাহ এবং কর্মদক্ষতার ফলে রাজশাহীতে দুটি ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর একটি ‘কুমারপাড়া রাইডার্স ক্লাব’ অপরটি ‘রাজশাহী বুলস’। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে কুমারপাড়া রাইডার্স রানারআপ হয়। রাজশাহী বুলস ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভ্যালে রানারআপ হয়।
হাসিনুর রহমান টিংকু বর্তমান সময়ে রাজশাহীর ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বাধিক আলোচিত একটি নাম। সার্বিকভাবে ক্রীড়ার সকল পর্যায়ে যে সমৃদ্ধি এবং বিকাশ তার পেছনে যাদের মেধা এবং শ্রম আছে তাদের মধ্যে হাসিনুর রহমান টিংকু অগ্রগণ্য। তাঁর সন্তানও একজন টেনিস খেলোয়াড়।