রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে। এ, বি ও সি এই তিন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (২৭ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
সংবাদ সম্মেলনে ভর্তি পরীক্ষার নিয়মাবলী, কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা, প্রক্সি জালিয়াতি রোধে নিরাপত্তাসহ শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের আবাসন ব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর নানা উদ্যোগের কথা জানান উপাচার্য।
এবারে কোটাসহ ৪ হাজার ৪৬৭ টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় বসবে মোট ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৯১ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে পুরুষ আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৩৮ টি এবং নারী আবেদনকারীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৭৫৩ টি। এবার একক আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮১৬ টি। পরীক্ষার জন্য ‘এ’ ইউনিটে ৭২ হাজার ৬৫ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৩০ হাজার ৬৭৫ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭৫ হাজার ৮৫১ টি চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭ টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ‘বি’ ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬ টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে খুলে দেওয়া হবে ভবনের গেইটঃ
এবার ভর্তি পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রের গেইট ও ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষের প্রবেশ গেইট খুলে দেয়া হবে। ৮০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নে ১০০ নম্বরের এই ভর্তি পরীক্ষা এক ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। এতে চারটি ভুল উত্তরের জন্য এক নম্বর কাটা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না এবং পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ও ক্যালকুলেটরসহ মেমোরিযুক্ত অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না।
জালিয়াতি রোধে থাকবে কয়েক স্তরে নিরাপত্তাঃ
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধে অসাধুচক্রের সদস্যদের তাৎক্ষণিক শাস্তি বিধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। উপাচার্য বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। এখানে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কারসাজির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন- শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা সজাগ আছে। এ বিষয়ে ভর্তি-পরীক্ষা কমিটি ও উপ-কমিটিসমূহ, ইউনিটভিত্তিক কমিটিসমূহ, পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত আইন-শৃংঙ্খলা বিষয়ক কমিটিসমূহ, র্যাব ও সকল গোয়েন্দা সংস্থা, প্রক্টর দপ্তর, ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর, জনসংযোগ দপ্তর, আইসিটি সেন্টার, পরিবহন দপ্তর এবং হল প্রশাসন নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে।
ভর্তির সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে অনলাইনেঃ
ভর্তি সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, বিষয় ও হল নির্বাচন, মাইগ্রেশনসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। এতে করে দ্রুত স্বচ্ছ ও নির্ভুল ফল প্রকাশ করা এবং সর্বোপরি জালিয়াতি ও কারসাজি রোধ করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞগণ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন প্রক্টরের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে ও এর সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে আহ্বানপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রক্টর অফিস মেস-মালিক সংগঠনের সাথে আলোচনা করেছে। তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। ইতোমধ্যে রাসিক মেয়রের নেতৃত্বে রাজশাহীর সুধীজন, সাংস্কৃতিক কর্মী, শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, মেস মালিক, পরিবহণ মালিক সমিতি এবং অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক সমিতির সাথেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতবিনিময় করেছে।
চিকিৎসা সহায়তায় থাকবে ছয় অ্যাম্বুলেন্সঃ
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ভর্তি-পরীক্ষা চলাকালে রাবি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালিত একটি মেডিকেল টিম কাজ করবে এবং সার্বক্ষণিকভাবে চারটি অ্যাম্বুলেন্সও থাকবে। এছাড়াও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জারগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১১টি হেল্পডেস্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদান করবে। এসব হেল্প ডেস্কে পানির ব্যবস্থাও থাকবে।
থাকবে ১১টি ওয়াটারপ্রুফ টেন্টঃ
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ১১টি ওয়াটারপ্রুফ টেন্টসহ শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টেন্টে অভিভাবকদের বসার জন্য ২০০টি করে চেয়ার থাকবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ১২টি স্থানে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে।
ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখবেন ১৩০ স্বেচ্ছাসেবীঃ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসের পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিছন্নতাকর্মী এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ১৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সকল ধরনের প্রচারণামূলক লিফলেট বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার বুথ স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডাস্টবিনে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্রের কয়েক কপি আনার নির্দেশঃ
সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্রের কয়েকটি করে কপি সঙ্গে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিজ দায়িত্বে রাখতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্লাব, সমিতি ও সংগঠনগুলো পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়েছে।
থাকবে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের থাকার ব্যবস্থাঃ
এদিকে, ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও নারী অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম ৯০ নম্বর বাসায় সীমিত ব্যবস্থা করা হয়েছে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ক্যাম্পাসে যান চলাচলে মানতে হবে নির্দেশনাঃ
২৯ থেকে ৩১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো শহরের নির্ধারিত স্থান থেকে সকাল সোয়া ৭টায় ক্যাম্পাস অভিমুখে ছেড়ে আসবে এবং ২৯ ও ৩০ মে ক্যাম্পাস থেকে বিলে সোয়া ৫টায় এবং ৩১ মে বেলা পৌনে ৩টায় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাবে। সকাল ৮ টার পর ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেইট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল-বেগম খালেদা জিয়া হল-স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে, শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সকল রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে।
এছাড়াও, সকাল ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনমুখী সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং অটোরিক্সাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। তবে পরীক্ষা সংক্রান্ত ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত গাড়িসমূহ এই নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে। ২৯ থেকে ৩১ মে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে সাবাস বাংলাদেশ মাঠে পার্কি করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাসরতদের ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট এবং রোকেয়া হলের পেছনের রাস্তা (ফ্লাইওভার সংলগ্ন) ব্যবহার করতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ তিন ইউনিটের সমন্বয়ক, অন্যান্য অনুষদ অধিকর্তাবৃন্দ, ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টর, পরিবহণ প্রশাসক, হল প্রাধ্যক্ষ, ভর্তি উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।