শিশু জন্মদানের হার কমে গেছে। বিয়ের হারও কমেছে। এ অবস্থায় বিবাহিত দম্পতিদের সন্তান নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে আসছে চীন সরকার। এবার সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানও তার কর্মীদের ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার বোনাস দেবে। চীনের সবচেয়ে বড় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপ ডটকম এই ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৩২ হাজার কর্মীকে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে চাইল্ড কেয়ার সাবসিডিজ নামে এই বোনাসের ঘোষণা দিলো।
চীনে জন্মহার কমে যাওয়াটাই শুধু উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং দেশটিতে বিয়ের হারও কমে গেছে। বর্তমানে দেশটিতে অনেকেই বিয়ে করছেনা। যা দেশটির জনসংখ্যাজনিত সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বোনাস ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠান ট্রিপ ডটকম এ কমপক্ষে তিন বছর ধরে চাকরি করা কর্মীরা প্রতিবছর প্রতিটি নবজাতকের জন্য এক হাজার ৩৭৬ মার্কিন ডলার করে বোনাস পাবেন। সন্তানের প্রথম জন্মদিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত এই বোনাস পাবেন কর্মীরা। পহেলা জুলাই শনিবার থেকে এই নীতি কার্যকর করবে প্রতিষ্ঠানটি।।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবছর প্রতিটি নবজাতকের জন্য এক হাজার ৩৭৬ মার্কিন ডলার করে বোনাস পাবেন। সন্তানের প্রথম জন্মদিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত এই বোনাস পাবেন কর্মীরা।
ট্রিপ ডটকমের নির্বাহী চেয়ারম্যান জেমস লিয়াং শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এই নতুন চাইল্ড কেয়ার বেনিফিট চালুর মাধ্যমে আমরা কর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেব। এতে কর্মীরা তাদের পেশাগত লক্ষ্য ও অর্জনের সঙ্গে আপস না করে পরিবার শুরু বা বড় করতে উৎসাহিত হবেন।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চীন বর্তমানে জনসংখ্যা–সংকটের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। গেল বছর চীনের জনসংখ্যা গত ৬০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমে গিয়েছিল। এই সময় দেশটিতে প্রতি এক হাজার জনে মাত্র ৬ দশমিক ৭৭ জন সন্তান জন্ম দিতেন, যা ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বনিম্ন জন্মহার। দেশটি এখন ভারত থেকে এক ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ।
২০১৫ সালে বেইজিং তার কয়েক দশক ধরে চলা ‘এক সন্তান’ নীতি বাতিল করে প্রাথমিকভাবে বিবাহিত দম্পতিদের দুই সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু ২০১৬ সালে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি হওয়ার পর দেশটির জাতীয় জন্মহার হ্রাস অব্যাহত আছে। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন।
ট্রিপ ডটকম চীনা ভাষায় আরেকটি বিবৃতিতে বলেছে, পূর্ণকালীন যেসব কর্মী অন্তত তিন বছর ধরে কাজ করছেন, তাঁরা লিঙ্গ, পদ বা কর্মস্থলনির্বিশেষে এই বোনাস পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
এই বিবৃতিতে জেমস লিয়াং বলেন, ‘আমি সব সময় পরামর্শ দিয়েছি, সরকার শিশুসহ পরিবারগুলোকে অর্থ প্রদান করুক…পরিবারের শিশুপালনের খরচ কমাতে এবং তরুণদের একাধিক সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে সহায়তা করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো অনুকূল প্রজনন পরিবেশ তৈরি করতে নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে পারে।’
চায়না সিকিউরিটিজ জার্নালসহ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেইজিং ডাবেইনং টেকনোলজি গত বছর বলেছিল, কোনও কর্মীর তৃতীয় সন্তানের জন্ম হলে তারা ওই কর্মীদের ১২ হাজার ৩৯১ মার্কিন ডলার নগদ বোনাস দেবে। আর প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলে যথাক্রমে চার হাজার ১৩০ ও আট হাজার ২৬০ ডলার বোনাস দেওয়া হবে।
আরবান স্যানিটেশন পরিষেবা সংস্থা কিয়াওইন সিটি ম্যানেজমেন্ট গত মাসে ঘোষণা দিয়েছে, তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়া কর্মীদের সংস্থাটি ১৩ হাজার ৭৫৯ মার্কিন ডলার বোনাস দেবে। সংস্থাটি বলছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল তরুণ কর্মীদের পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমানো এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়া।
জুনের শুরুর দিকে চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ছয় দশমিক ৮৩ মিলিয়ন দম্পতি বিয়ে করেছেন, যা ২০২১ সালে নিবন্ধিত সাত দশমিক ৬৩ মিলিয়ন বিয়ের চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কম। ১৯৮৬ সালে এই মন্ত্রণালয় তথ্য প্রকাশ করা শুরুর পর থেকে এটি সর্বনিম্ন রেকর্ড।
গত বছর চীনের জনসংখ্যা গত ৬০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমে গিয়েছিল। এই সময় দেশটিতে প্রতি এক হাজার জনে মাত্র ছয় দশমিক ৭৭ জন সন্তান জন্ম দিতেন, যা ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বনিম্ন জন্মহার।
দেশটির আইনপ্রণেতারা ২০২১ সালে সন্তান জন্মের সীমা শিথিল করে তিন সন্তান জন্মের অনুমতি দিয়েছেন। এছাড়া বড় পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে মাতৃত্বকালীন ছুটি শক্তিশালী করতে গত বছর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিবারগুলোর ট্যাক্স কমানো ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান।
তবে পরিবর্তনশীল লৈঙ্গিক নিয়ম, জীবনযাত্রা, শিক্ষার উচ্চ ব্যয় ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এসব উদ্যোগে এখনো কোনও সুফল বয়ে আনেনি।