রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ মোড়ে প্রতিদিন ভোরে দিনমজুররা জড়ো হন কাজের আশায়। এখান থেকে দিন চুক্তিতে বিভিন্ন কাজ করতে যান তারা। কখনো কাজ মিলে, কখনো বা আশায় আশায় দিন কেটে যায়।
গত কয়েকদিন থেকে দেশজুড়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠাণ্ডায় ঘর থেকে জরুরি কাজ ছাড়া অনেকেই বের হচ্ছেন না। কিন্তু এসব দিনমজুরের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই ভোর হওয়ার সাথে সাথে বসিলা, ঢাকা উদ্যানসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসে জড়ো হন শিয়া মসজিদ মোড়ে। মোহাম্মদপুর ছাড়াও বারিধারা নতুন বাজার, মিরপুর, মহাখালী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোরে ডালি কোদাল নিয়ে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ বের হন কাজের সন্ধানে।
রোববার সকালে ৯টায় দিকে শিয়া মসজিদ মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের এসব মানুষের জটলা। কারো কারো গায়ে শীতের হালকা পোশাক থাকলেও অনেকেই স্বাভাবিক সময়ের ব্যবহার করা পোশাকটিই পরে আছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে কাজের সন্ধানে আসেন তারা।
মুহূর্ত নিউজের প্রতিবেদক কাছে গেলে তাকে ঘিরে ধরেন দিনমজুররা, জানতে চান কাজের জন্য লোক নিতে এসেছেন কি না। সকাল ৯.৩০টার দিকে সেখানে শ্রমিক নিতে আসেন কাঁটাসুরের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন। তাকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায় জটলাবদ্ধ মানুষগুলোকে। মোয়াজ্জেম ৬ জন লোক নিয়ে যান সেখান থেকে। তিনি চলে যাবার সময় অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ‘আর লোক লাগবো না স্যার?’ মাথা নেড়ে মোয়াজ্জেম জানালেন, না। মুহূর্তেই উচ্ছ্বসিত মানুষগুলোর চেহারা যেন বিষন্ন হয়ে গেল। শুরু হল অনিশ্চিত অপেক্ষা, আবার কেউ আসবেন, হয়তো মিলবে কাঙ্ক্ষিত কাজ।
কিশোরগঞ্জের মতিন মিয়া জানান, শীত বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের দুর্ভোগও বেড়েছে। যখন যে কাজ পান সেটাই করেন তারা। গত কদিন থেকে প্রচণ্ড ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে আবার মতিন কাজ করতে পারেননি গত এক সপ্তাহ। পরিবারের ৫ জন সদস্য তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল তাই একদিন কাজ না পেলে পরিবারের জন্য একবেলার খাবারের যোগান দিতে পারেন না মতিন মিয়া।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা আকলিমা বেগম বলেন, নতুন বছরে দুয়েকদিন কাজ করতে পেরেছেন। বাকি দিনগুলো কাজের আশায় বের হলেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। গত কয়েকদিন লবণ দিয়ে ভাত খেয়েছেন আকলিমা। এমন দিনও গেছে একবেলার খাবার জোটেনি তার।
পঞ্চাশোর্ধ ইদ্রিস আলী এসেছেন কেরানীগঞ্জ থেকে। গতকালও কাজ করেছেন তবে আজ সকাল ১০টা বাজলেও অপেক্ষা শেষ হয়নি। জানান, শীতের মধ্যে কাজ করতে পারলে ঠান্ডা কম লাগে।
মতিন মিয়া আর আকলিমা বেগমের মতোই গল্প সেখানে থাকা বেশিরভাগ মানুষের। হতদরিদ্র এসব মানুষ জানান, শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ার পর থেকে জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে গেছে।
ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত কোনরকম শীতবস্ত্রও পাননি তারা, মেলেনি সামান্য সহায়তায়ও।