বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে জার্মান নাট্যকার ও কবি বার্টল্ড ব্রেখটের লেখা সর্বকালের সেরা যুদ্ধবিরোধী মঞ্চ নাটক মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন। চার মার্চে শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি মঞ্চায়িত হবে।
ইউরোপের ত্রিশ বছরের ধর্ম যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত যুদ্ধবিরোধী এপিকধর্মী ক্রনিকল নাটকটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রয়োজনায় মঞ্চায়িত হবে।
নাটকটির নির্দেশনায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজা মোহাম্মদ আরিফ। ইতোমধ্যে নাটকটি সাড়া ফেলেছে দর্শকদের মাঝে। সম্প্রতি নাটকটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে মঞ্চায়িত হয়। এটি দেখার জন্য মুক্তমঞ্চে কানায় কানায় ভরে ওঠে দর্শক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে এটি।
জার্মান নাট্যকার বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ‘মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র এনা ফিয়ার্লিং একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিনের মালিক। যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মধ্যেও তিনি অসীম সাহসের সঙ্গে নিজের মালামাল যেভাবে বাঁচিয়েছে তারই স্বীকৃতিস্বরূপ লোকজন তার উপাধি দিয়েছে মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন।
তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে বেপরোয়া ও দুঃসাহসী, যার নাম এলিফ। ছোট ছেলে অত্যন্ত সৎ, তার নাম সুইস পনীর। তরুণী কাট্রিন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অনুভূতিপ্রবণ, কিন্তু বোবা পরিবারের পঞ্চম সদস্যের জীবিকা নির্বাহের মূল অবলম্বন তার খাবার গাড়িটি।
সন্তানরা খাবারের গাড়ি টানে, মা ও তিন সন্তান গাড়ি নিয়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায়। যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে মা সৈন্যদের কাছে খাবার ও অন্যান্য তৈজসপত্র বিক্রি করে পরিবারের সবার জীবিকার সংস্থান করে। সযত্নে চাতুর্যের সঙ্গে তিন সন্তানকে বাজ পাখির ন্যায় যুদ্ধের আঁচ থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু এক পর্যায়ে বেপরোয়া এলিফ সুইডিশ প্রটেস্ট্যান্ট সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপের জন্য খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে। সুইস পনীরও ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দেয় সেনাবাহিনীতে কিন্তু তার সততা ও দায়িত্ববোধই তার মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়। আক্রমণকারী শত্রু সৈন্যদের হাত থেকে নিজেদের সেনাবাহিনীর ক্যাশবাক্স বাঁচাতে গিয়ে সে ধরা পড়ে।
যুদ্ধের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন একে একে তিন সন্তানকেই হারান। তবুও জীবন যুদ্ধে মাদার কারেজ কখনোই হার মানেননি। একজন নারীর জীবন যুদ্ধ এবং যুদ্ধ যুদ্ধচলাকালে শত ত্যাগের কাহিনী ফুটে উঠেছে নাটকটিতে।
নাটকটিতে অভিনয় করবেন অর্ণব মল্লিক, তাহুয়া তুরা, ইগিমি চাকমা, হ্রুই মুইং সাং মারমা, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন, সাজ্জাদুল শুভ, তাসফিয়া বাঁধন, শুক্লা রায়, রিফাত, জিশান, ইফতু, হৃদয় রায়, রায়হান, আলভি, এলিজা, জয়ন্ত ত্রিপুরা, মিরাজ প্রমুখ। তারা সবাই নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।