রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ১২৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরমেধ্যে গত বৃহস্পতিবার যাচাই-বাছাই শেষে ১১৭ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। তবে এদের মধ্যে ৩৮ জনের নামে এক থেকে সর্বোচ্চ ২১টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। এদের কেউ হত্যা, কেউ অস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং চোরাচালান মামলার আসামি বলে জানা গেছে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৪৪ শতাংশই বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামি।
নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি ২০টি মামলা চলমান রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে বিচারাধীন ১২টি, তদন্ত চলছে ছয়টির। ইতোমধ্যে দুটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর বেশিরভাগই বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।
তবে এসব মামলার বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে কামরুজ্জামান নামে দুজন রয়েছেন। আমি কামরুজ্জামান কামরু। আমার নামে কোনও মামলা নেই। যার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তিনি হলেন কামরুজ্জামান সোহেল, রাজপাড়া থানা জামায়াতের আমির। বর্তমানে জেলখানায় আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।’
এদিকে, ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ৪৬ জন। তবে তাদের নামে কোনও মামলা নেই। দুই জনের নামে আগে মামলা থাকলেও তারা পরে খালাস পেয়েছেন।
হলফনামার তথ্যমতে, কাউন্সিলর পদে এই ৩৮ জন ছাড়াও অন্য ১৮ জন আগে মামলার আসামি ছিলেন। ইতোমধ্যে কেউ মামলা থেকে অব্যাহতি, কেউ খালাস পেয়েছেন। কেউ কেউ বাদীর সঙ্গে আপস করে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আফজাল হোসেনের নামে মামলা আছে ১৪টি। এর আগে তিনটি মামলায় খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোও বিস্ফোরকদ্রব্য ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী জামায়াত নেতা আবদুস সামাদের নামে মামলা আছে ছয়টি। এর মধ্যে দুটি বিচারাধীন, চারটির তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে চার মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা চলমান। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমানের নামে একটি মামলা আছে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চুর নামে দুটি মামলা বিচারাধীন। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রবিউল ইসলামের নামে চার মামলা বিচারাধীন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আলিফ আল মাহমুদের নামে তিনটি মামলা বিচারাধীন। আগে ছয়টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
১৫টি মামলা থেকে খালাস পেলেও এখনও একটি মামলা চলমান ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রেজাউন নবী আল মামুনের বিরুদ্ধে। ১০ নম্বরের প্রার্থী রাজ্জাক আহমেদ রাজনের নামে মামলার সংখ্যা দুইটি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের নামে মামলা আছে তিনটি। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা। একটি হত্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ২০১৮ সালে।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আশরাফ হোসেন বাবু তিন মামলার আসামি। এর মধ্যে দুইটি বিচারাধীন। একটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটোর নামে আছে হত্যাসহ দুইটি মামলা। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে দুটি মামলা চলছে।
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল আহমেদের নামে বিচারাধীন মামলা আছে দুটি। ৩০ নম্বরের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা একটি। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান একটি মামলার আসামি।
২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নোমানুল ইসলামের নামে মামলা আছে দুটি। ২৬ নম্বরের ওয়ার্ডের মহিউদ্দিন বাবুর নামে বিচারাধীন মামলা চারটি। তিনটিতে খালাস পেলেও এখনও দুটি মামলা চলছে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মাসুদ রানার বিরুদ্ধে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আদালতে আট মামলার বিচার চলছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমানের নামে মামলা আছে তিনটি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হামিদুল ইসলামের নামে বিচারাধীন মামলা দুটি। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মোখলেসুর রহমানের নামে মামলা আছে সাতটি।
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন বিচারাধীন ৯ মামলার আসামি। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী আনারুল ইসলাম ও একলাস হোসেন লাকি একটি করে মামলার আসামি। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন তিন মামলার আসামি। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুবক্কর কিনুর নামে জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলা আছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. টুটুলের নামে মামলা আছে তিনটি। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর তরিকুল আলমের নামে তিনটি মামলা বিচারাধীন।
এ ছাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও মুরাদ আলী একটি করে মামলার আসামি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আখতার আহম্মেদ বাচ্চু, ২৯ নম্বরের আবু জাফর বাবু, ৬ নম্বরের মো. বদিউজ্জামান, ২৬ নম্বরের মোখলেসুর রহমান খলিল, ২৭ নম্বরের মো. মনিরুজ্জামান, ৮ নম্বরের জানে আলম খান জনি, ২৪ নম্বরের জাহাঙ্গীর আলম ও ১০ নম্বরের আমিনুল ইসলামের নামে একটি করে মামলা আছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘সৎ ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা জনগণের দায়িত্ব। তারা প্রার্থীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ভোট দেবেন, এটাই হওয়া উচিত। তাহলে একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। কোনও দাগি আসামি, সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তান যেন জনপ্রতিনিধি না হতে পারেন, সে বিষয়ে ভোটারদেরই খেয়াল রাখতে হবে। ভোটের সময় দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভুলে গেলে চলবে না।’
তবে মামলা থাকলেও প্রার্থী হতে পারেন বলে জানালেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিরাও প্রার্থী হতে পারেন। আগামী ২ জুন প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।’