স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার (২২ মার্চ) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ানো না হলেও, এখনও দু-একদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, গত ১১ মার্চ বাসে বসাকে কেন্দ্র করে বাসের কন্ডাক্টরের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর হওয়া তর্কাতর্কির ঘটনায় স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর তারিকুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রশিদ সরকার ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. শফিকুজ্জামান জোয়ার্দ্দার। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল গত বুধবার। কিন্তু এখনো কমিটি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি বলে জানা গেছে।
কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার সাক্ষাৎকার নিলেও ঘটনার সূত্রপাত যে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে, সেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ বণিকের সাক্ষাৎকার এখনো গ্রহণ করা হয়নি। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি বিনোদপুর বাজার কমিটির সভাপতিরও।
তদন্ত কমিটির সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিনোদপুর বাজার মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল, কিন্তু তারা বসেননি।’
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের বিভাগের কার্যক্রম করার পাশাপাশি প্রতিদিন দুইবার করে বসে তদন্তের কাজ করছি। তাছাড়া, ঘটনাটির অনেকগুলো পক্ষ রয়েছে। ফলে, আমরা এখনো সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বক্তব্য নিয়ে শেষ করতে পারিনি। এজন্য প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারিনি।’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ওইভাবে আমরা আবেদন করিনি। আমাদের আহ্বায়ক মহোদয় বিষয়টি জানেন। আমি যতটুকু জানি যে, উনি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন আরও দু-একদিন সময় লাগতে পারে। আসলে সাতদিন সময় আমাদের জন্য কিছুটা টাফ হয়ে গিয়েছিল।’
এদিকে এ ধরনের তদন্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘আই ওয়াশ’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি একটা ‘আই ওয়াশ’। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার জন্য কিছু কথা-বার্তা বলতে হয়। তদন্ত কমিটিও সেরকমই একটা ব্যাপার। কোন একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পরে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্টরা হয়তোবা প্রত্যাশা করেন যে, এক সপ্তাহ বা এক মাস যেতে যেতে মানুষ ঘটনাটির কথা ভুলে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষজন ভুলেও যায়। এছাড়া আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্টরাও হয়তোবা ভুলে যান যে, তারা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। সম্প্রতি সংঘটিত এতো বড় একটা ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জানার অধিকার আমাদের সকলেরই আছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, তারা শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে। মূলত, ঘটনাটির পরিসর বড় হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।’