রাবি’র দুই ছাত্রলীগ নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ

শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক মো. সোলাইমানকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। রাবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে শারীরিক নির্যাতনের পর শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির দেয়ার সত্যতা পাওয়ার পর এমন প্রস্তাব দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকল বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আমাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। হল প্রশাসন এ প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবে বলেও জানান তিনি।

অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিলসহ চারটি সুপারিশ করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তাদের সুপারিশগুলো হলো- 

এক. অভিযুক্ত মো. সোলাইমান ও নাইম উভয়ই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। তারা দীর্ঘদিন হলে অবস্থান করলেও হলের আবাসিকতার জন্য কখনো আবেদন করেননি। উভয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও বহু মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি অভিযুক্ত নাইম আলী একাধিকবার হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি অবৈধভাবে হলের সিট দখল, বৈধ শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগে বাধ্য করা, হলের সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাধা দেওয়াসহ নানা অনৈতিক কাজে সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তিনি একাধিকবার হলের আবাসিক শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এমনকি প্রাধ্যক্ষকে দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

দুই. তদন্ত কমিটি মনে করে কৃষ্ণ রায়ের ঘটনাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ কালের সুনাম ও ঐতিহ্যকে ক্ষুন্ন করেছে। তাই কোনভাবেই যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও কঠোর ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। একইভাবে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করেন তারা। তা না হলে এমন আরও অনেক দুঃখজনক ঘটনা ঘটাবে। 

তিন. অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় উদঘাটন করা যায়নি ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা গেল না।

চার. বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা, সুনাম ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে অনাবাসিক এই দুই শিক্ষার্থীকে আর কখনো হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিকতা প্রদান না করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য তদন্ত কমিটি জোর সুপারিশ করেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৮৩ নম্বর কক্ষে কৃষ্ণ রায়কে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান। 

এ ঘটনায় কৃষ্ণ রায় ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগের পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন।

leave a reply