রাজশাহীতে চালু হলো প্রথম প্রিন্টমেকিং স্টুডিও

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ১১জন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু হলো রাজশাহীর প্রথম প্রিন্টমেকিং স্টুডিও ‘আতেলিয়ার বায়ান্ন’। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের পাশুণ্ডিয়া গ্রামে এই স্টুডিওটি স্থাপন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী দিনে সেখানে ‘ছাপচিত্রে ভাষার লড়াই’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালার কর্মশালা ও স্টুডিওর উদ্বোধন করেন দেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম।

উদ্বোধনকালে অধ্যাপক কাশেম বলেন, শিল্পী বনি আদমের এই উদ্যোগটি খুবই বিরল। সব শিল্পীর এরকম যন্ত্র থাকে না। যাদের আছে তারা খুব একটা কাজ করেন না। আমি আশা করি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বনি আদমের এই উদ্যোগ সফল হবে। এখন ফেব্রুয়ারি মাস, আমাদের ভাষা সংগ্রামের মাস। এই মাসেই ছাত্রজনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল। একুশকে সমুন্নত রাখতে ড. বনি আদমের এই উদ্যোগ। এখানে একুশটি ছাপচিত্র তৈরি করা হবে। যাকে কেন্দ্র করে আমাদের জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকের এই কর্মশালাটি সফল হবে বলে আশা করছি।

স্টুডিওর পরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মূল উৎস হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনকে ভিত্তি করেই বাঙালিরা এগিয়ে যায় স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সেই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে ভাষা-সংগ্রামের মাস ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা করল ‘আতেলিয়ার বায়ান্ন’ শীর্ষক প্রিন্টমেকিং স্টুডিও। ‘আতেলিয়ার বায়ান্ন’ রাবির ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের ১১জন শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ততায় রাজশাহীতে প্রথম প্রিন্টমেকিং স্টুডিও, যাদের মেধা-মনন ও শিল্পকুশলতায় নির্মিত ছাপচিত্রকর্মগুলো বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

কর্মশালায় ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে একুশটি ছাপচিত্র রচনা করেন অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ১১জন শিল্পী হলেন- রাবির গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাফিদা ইয়াসমিন, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বালিজুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, রাগিব শাকিল অর রাফি ও বর্তমান শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা, সৌমিক ঘোষ, মুস্তাকিম সাদাত মাফিন, তাজকেরাতুন সেতু, প্রকাশ চন্দ্র রায়, লাবু হক এবং আছিয়া খাতুন।

রাজশাহীতে প্রথম কোন ছাপচিত্র বিষয়ে স্টুডিও পেয়ে উচ্ছ্বসিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও। রাবি শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা বলেন, রাজশাহীতে প্রথম স্টুডিও পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। আমরা পূর্বে তেমনভাবে ক্লাসের বাইরে এসে কাজ করার সুযোগ পেতাম না। এই স্টুডিওর যাত্রার মাধ্যমে আমাদের ক্লাসের বাইরে কাজ করার এক নতুন সুযোগ তৈরি হলো।

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্রের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বালিজুর রহমান। তিনি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম নিয়ে ছবি আঁকছেন। এই স্টুডিওর মাধ্যমে কাজ করার নতুন এক প্ল্যাটফর্ম পেলাম, যা আমার ছাপচিত্র চর্চাকে এগিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবে।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মশালার শেষদিন অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হবে।


leave a reply