যমুনার বুকে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের আরকেটি স্বপ্ন। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ। ইতোমধ্যে সেতুটির ১১টি স্প্যান দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুটি চালু হলে রাজধানী ঢাকার সাথে আরও দ্রুত রেল যোগাযোগ সহজ হবে। এতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ উভয় লাইন যুক্ত থাকবে।
ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজ করছেন নির্মাণযজ্ঞের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি কর্মীরা। এরইমধ্যে ৩৫ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। পিলারের উপর ১১টি স্প্যান বসায় এখন অনেকটাই দৃশ্যমান রেলসেতু। সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু চালু হলে ঢাকার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগসহ খুলবে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইলে নদীর দুই পাড়ে আলাদা প্যাকেজে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে সেতুর ১.৯ কিলোমিটার এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। স্প্যানের মধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজও চলছে। সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫টির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকি ৩৫টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি পিলারের ওপর বসবে আরও স্প্যান। নির্মাণ শ্রমিকরা দিনরাত পালাক্রমে এই সেতুর ওপরে এবং নিচে কাজ করছেন।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন যাত্রী ও মালবাহী মিলে ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হয়।
এতে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। একই সাথে মালবাহী ট্রেন চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নামে আলাদা একটি রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এই সেতুটি বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি চালু হলে ঘণ্টায় ১শ’ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে সব ধরনের ভারি মালবাহী ট্রেনসহ প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কন্টেইনারবাহী ট্রেন পণ্য নিয়ে সরাসরি আসা যাওয়া করতে পারবে। এতে ব্যবসায়ীরা খুব কম খরচে পণ্য আমদানি রফতানি করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর ১০টি স্প্যান বসানোসহ পুরো প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫৩ ভাগ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা নতুন আশার আলো দেখছি। ট্রেনে মালামাল বহন অনেকটা সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। এতে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেলসেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেলসেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ২০২৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়ছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।