যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হলে আটকে রেখে মারধর ও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর রুমে প্রায় চার ঘন্টা ধরে ইসমাইল হোসেন নামের ওই শিক্ষার্থীকে রড, জিআই পাইপ ও বেল্ট দিয়ে নির্যাতন করা হয়। বর্তমানে তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন এন্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থী।
নির্যাতিত ইসমাইল জানান, ‘রোববার যোহরের নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ থেকে আমাকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সালমান (সিএসই চতুর্থ বর্ষ)ওই হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর শোয়েব ও সালমানসহ নীল পাঞ্জাবি পরিহিত একজন দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যায় ছয়টা পর্যন্ত আমাকে চড়, থাপ্পড়, বেল্ট ও জিআই পাইপ দিয়ে মারধর করে। পরে আমার বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা এ খবর পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।’
ইসমাইল আরও জানান, ‘রুমে ঢুকেই শোয়েব (সিএসই চতুর্থ বর্ষ) আমার নাম পরিচয় জানতে চেয়ে বলে “তুই তো বড়ভাইদের সম্মান করতে জানিস না, এই তুই তো ভর্তি বাণিজ্যের সিন্ডিকেট চালাস।” এরপর আমাকে তাদের মাঝখানে বসিয়ে প্রথমে শোয়েব চড় মারে, আমি রোজা ছিলাম, মাথা ঘুরে চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করি। সাথে সাথে অন্যপাশ থেকে সালমানও চড় মারে। এসময় তারা আমাকে সিন্ডিকেট চালানোর কথা বলে সাথে আর কে কে আছে জিজ্ঞেস করে। আমি তাদের কথায় সিন্ডিকেটের বিষয়ে অস্বীকার করলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তারা। এসময় তারা আমার কাছে প্রথমে দুই লাখ টাকা দাবি করে। এরপর পাঁচ লাখ টাকা চায়। আমি ওদের নির্যাতন সইতে না পেরে টাকা দিতে রাজি হই।কিন্তু তাৎক্ষণিক টাকা দিতে না পারায় আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় তারা। এরপর তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে ভর্তি বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের সাথে থাকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করে এবং দশ লাখ টাকা দেয়ার শর্তে রাজি করে। এরপর তারা আমাকে পাশের রুমে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে আমার বাসায় ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শোয়েব বলেন, ‘আমি কাউকে রুমে আটকে রেখে চাঁদা দাবি করেছি বা মেরেছি এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমনকি এ ব্যাপারে আমি জানিও না। আমার সাথে ইসমাইলের কোনও দ্বন্দ্বও নেই, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমাদের ২০১৮-২০১৯ সেশনের আজ ইফতার মাহফিল ছিল এজন্য আমরা রুমে কথা বলছিলাম। এরমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফ ভাই, রনি ভাই ও নোমান ভাই আমাদের রুমে ঢুকে আমাদেরকে হুমকি দেয়।’
আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সালমান বলেন, ‘ইসমাইল আমাদের বন্ধু তাকে মারব এটা কোনভাবে সম্ভব না। আজকে আমাদের বর্ষের ইফতার মাহফিল ছিল তাই এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলছিলাম। এরমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন বড় ভাই আমাদের রুমে এসে আমাদেরকে গালিগালাজ করে ও বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট।’
এবিষয়ে আইপি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান সুকর্ণ বলেন, ‘আমি টিউশনিতে থাকা অবস্থায় নোমান নামের একজন আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ইসমাইলকে হলে আটকে রেখে কিছু শিক্ষার্থী মারধর করছে। এ খবর জানার পর আমি তৎক্ষণাৎ টিউশনি রেখে রনি ও নোমানকে সাথে নিয়ে হলে এসে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করি। এসময় ও অনেক ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল। এমনকি রুমে প্রবেশের সাথে সাথে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে জড়িয়ে ধরে আশ্রয় চায়। এছাড়া তারা আমাদের ব্যাপারে হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন। এমনকি শোয়েব আমাকে মারতে আসলে রনি ও নোমান ওকে থামায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষার্থী জানান, এদের বিরুদ্ধে এরকম জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আগেও ছিল এবং এরা এগুলো করেছে তা অনেকেই জানে।
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, আমরা বিষয়টি জানা মাত্রই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে হল অফিসে নিয়ে এসে শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি।তৎক্ষনাৎ তাকে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি এবং তার চিকিৎসার সকল খরচ হল প্রশাসন বহন করছে।
এদিকে, এ ঘটনায় রোববার রাত ১০টার দিকে প্রভোস্ট বডির জরুরি সভায় ইসমাইলকে নির্যাতনের ঘটনায় ও হলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোয়েব ও সালমানকে শহিদ মসিয়ুর রহমান হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রভোস্ট ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যবিপ্রবির শহিদ মশিউর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষের এক শিক্ষার্থীকে কিছু শিক্ষার্থী আটকে রাখার ঘটনা জানার সাথে সাথে প্রভোস্ট বডি সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। আমি প্রভোস্ট বডিকে নির্দেশ দিয়েছি ঐ রুম সিলগালা করে দেওয়ার জন্য এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যদি আবাসিক হয় তাহলে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার জন্য। এছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ করে তাহলে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।’
সদর হাসপাতালের ডাক্তার মোঃ ফাহিম জানিয়েছেন, রোগী আপাতত আশঙ্কামুক্ত। কিছু পরীক্ষা দিয়েছি, রিপোর্টগুলো দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।