বিদায় বুফন, বিদায় সুপারম্যান

২৮ বছর। একজন পেশাদার ফুটবলারের ক্যারিয়ারে ব্যাপ্তি যখন হয় প্রায় তিন দশকের। তখন বুঝে নেয়া যায়, মাঠে তার প্রভাব ও পারফরম্যান্সের ধার আসলে কতটা। তবে জিয়ানলুইজি বুফন নামটি বললেও, ফুটবল প্রেমীদের কাছে সে উত্তরটা পরিষ্কার হয়ে উঠবে সন্দেহাতীতভাবেই। সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপারদের একজন তিনি। তবে সব শুরুর যেমন শেষ রয়েছে, সেই রীতি মেনে পেশাদার ক্যারিয়ারের সেই শেষ টানতে যাচ্ছেন বুফন। অবসর নিতে যাচ্ছেন ফুটবল থেকে, তুলে রাখতে চান গ্লাভসজোড়া।

নানা রঙে বর্ণিল ক্যারিয়ার বুফনের। পার্মার হয়ে এসি মিলানের বিপক্ষে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিলো মাত্র ১৭ বছর ২৯৫ দিন বয়সে। সেই ম্যাচ দিয়েই নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন বুফন। কয়েক মৌসুম পার হতে না হতেই নিজের জাত চিনিয়ে পেয়ে যান ‘সুপারম্যান’ তকমা। দুর্দান্ত অ্যাথলেটিজম ও বাতাসে দক্ষতার জন্য সেই তকমাটা স্থায়ী হয়ে যায় বুফনের ক্যারিয়ারে।

ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন ইতালিতে। পার্মার বয়সভিত্তিক দল দিয়ে শুরুর পর জায়গা করে নেন মূল দলে। ছয় মৌসুমে ২২০ ম্যাচ খেলে ২০০১ সালে গোলকিপারদের দামের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে যোগ দিয়েছিলেন জুভেন্টাসে। সে সময়ই তাকে নিতে তুরিনের বুড়িদের খরচ করতে হয়েছিলো ৫ কোটি ২০ লাখ ইউরো। এরপর জুভেন্টাসে কাটিয়ে দেন টানা ১৭ বছর। এসময় ৯ বার সিরি আ জেতার পাশাপাশি সুপারকোপা ইতালিয়া ও কোপা ইতালিয়া জিতেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলেছেন তিনবার। ক্লাবটির সাথে তার বন্ধন এতই দৃঢ় ছিলো যে ২০০৬ সালে কুখ্যাত সেই ‘ক্যালসিওপলি’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে জুভেন্টাস সিরি বি-তে নেমে গেলেও ক্লাব ছাড়েননি বুফন।

২০১৮ সালে জুভেন্টাস ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিলেও এক মৌসুম শেষেই আবার ফেরেন জুভেন্টাসে। ব্যাক আপ গোলকিপার হিসেবে আরো দুটি মৌসুম কাটান তুরিনের ক্লাবটিতে। তার আগেই জুভেন্টাসের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন বুফন। দুই মেয়াদ জুভেন্টাসে ৬৮৫ ম্যাচ খেলে ক্লাবটির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব গড়েন। ক্লাবটির হয়ে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন শুধু আলেহান্দ্রো দেল পিয়েরো।

২০২১ সালে আবার পার্মায় যোগ দেন বুফন। তবে সিরি বি থেকে পার্মাকে ইতালির শীর্ষ লিগে ফেরানোর লক্ষ্য পূরণ হয়নি তার। আগামী বছরের জুনে ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। কিন্তু তার আগেই চুক্তি বাতিল করে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন ৪৫ বছর বয়সী বুফন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। পুরো ক্যারিয়ারে পোস্টোর নিচে চিতার মতো ক্ষিপ্র, ব্যক্তিত্ব, দাপুটে মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ১১০০ এর বেশি পেশাদার ম্যাচ খেলা বিরল ১৫ জন ফুটবলারের একজন বুফন।

জাতীয় দলের হয়েও তার অর্জন কম নয়। ছিলেন ইতালির ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি। ইতালিয়ান ফুটবলে তার অবদান অনেক, অর্জনও অনেক। ৬৪৮ ম্যাচ নিয়ে সিরি আতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড তাঁর। ইতালির এই শীর্ষ লিগে সবচেয়ে কম গোল হজম করা গোলরক্ষক তিনি। সিরি আ যুগে সর্বোচ্চসংখ্যক শিরোপা জয়ের রেকর্ডও বুফনের দখলে। ইতালি জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটাও তার দখলে। মাঠের ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর ইতালি জাতীয় দলের প্রধান ডেলিগেশন কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে বুফনকে।

এমন বর্ণিল ক্যারিয়ার যার, বিদায় বেলায় তার জন্য করুণ সুর বেঁজে উঠাটাই তো স্বাভাবিক। তবে শুভকামনা জানিয়েই ভক্ত সমর্থকরা তাকে বিদায় বলবেন এমনটা তো বুফনের প্রাপ্যই। বিদায় বুফন, বিদায় সুপারম্যান।

leave a reply