বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
কিডনি গ্রহীতা হলেন পিরোজপুরের বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী সুজন রায়। আর কিডনি দাতা হলেন ৩১ বছর বয়সী তারই ছোট ভাই সুসেন রায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি চিকিৎসক দল এই ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে স্বাস্থ্যখাতের পদ্মাসেতু উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অর্গান ট্রান্সপ্লান্টসহ এ ধরনের চিকিৎসাসেবা নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছেন। আশা করি, এসব দেশের রোগীরাও বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা নিবেন।
উপাচার্য বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রয়েছে বিশ্বমানের পাঁচটি সেন্টার। রয়েছে দেশের সেরা অপারেশন থিয়েটার। এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পর দেশের চিকিৎসাসেবা দানে বিশেষ করে সর্বাধুনিক উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। কয়েক শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
উপাচার্য বলেন, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টকে বেগবান করতে ক্যাডভারেকি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ব্রেনডেথ একজন রোগীর কিডনি, কর্নিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গদানের মাধ্যমে আটজন রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে তাদেরকে নতুন জীবনদান করা সম্ভব। আর এ জন্য ক্যাডভারেকি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য জানান, ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের রোগী ও লিভার দাতা এবং ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর মাধ্যমে যে দুজন কিডনি রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং দুজন কর্নিয়ার সমস্যায় ভোগা রোগীর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তারা সকলেই সুস্থ আছেন।
ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে আটজন ভর্তি রোগীসহ আরও ৩০ জন রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার অপেক্ষায় রয়েছেন। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রয়েছে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ইউনিক অপারেশন থিয়েটার যা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই এবং এখানে সপ্তাহের ছয় দিনই ট্রান্সপ্ল্যান্ট সংক্রান্ত ওটি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।
কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নার্সিং অনুষদের ডিন ও এ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইসতিয়াক আহম্মেদ শামীম, পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ আল হারুন প্রমুখসহ সংশ্লিষ্ট বিভিাগের চিকিৎসক ও নার্সরা।
দেশের রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ রোগী দেখা শুরু করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। ল্যাবরেটরি টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইটিটি, ইকোসহ সর্বমোট ৪০ হাজারেরও অধিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৫ জুলাই অন্তঃবিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১২২ জন রোগী সেবা নিয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৫ জন। এ সময়ে ১৬ জন রোগীকে অপারেশন সেবা দেয়া হয়েছে।