বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিদেশে: রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি। কিন্তু এর মধ্যেই বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত চার নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা সিঙ্গাপুরে, একজন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। চিকিৎসার কারণে তারা বিদেশে রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে শিগগির তারা দেশে ফিরবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, একদফার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে, তখন দলের গুরুত্বপূর্ণ এসব নেতার বিদেশে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা, গুঞ্জন চলছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকার বাইরে সব মহানগরে কর্মসূচি হয়েছে। আমাদের নেতারা নানা কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্দোলনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। দলের সাংগঠনিক নেতৃত্ব কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। তার সঙ্গে স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও রয়েছেন। আফরোজা আব্বাস মহিলা দলের সভাপতি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুজনই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন মির্জা আব্বাস। তার হৃদরোগের ঝুঁকিও আছে। ইতঃপূর্বে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। তারই ফলোআপসহ সেখানে আফরোজা আব্বাসের কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে।

মির্জা আব্বাসের আগে গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও সিঙ্গাপুরে যান। দুজনই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েক বছর আগে মির্জা ফখরুলের ঘাড়ে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়ে। তার গলার ধমনিতে রক্ত চলাচলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। মির্জা ফখরুলকে চিকিৎসার ফলোআপের জন্য সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে যেতে হয়। স্ত্রী রাহাত আরা বেগমেরও সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ফলোআপের জন্য তাকেও ওই হাসপাতালে যেতে হয়।

এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ জুন তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ব্রেনের বহির্ভাগে একটি ‘মেনেনজিওমা টিউমার’ ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা রেডিয়েশনের মাধ্যমে টিউমার অপসারণে থেরাপি দিচ্ছেন। জানা গেছে, মোট ২৮ দিন রেডিয়েশন দিতে হবে, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এটি চলবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বিকেলে কালবেলাকে বলেন, শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে ভালোর দিকে। তিনি সুস্থতার জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন। বিএনপির তিন জ্যেষ্ঠ নেতার সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, তিনি শুনেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য এসেছেন।

এদিকে, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তিনিও চিকিৎসাজনিত কারণে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানান দলের এক নেতা। গত ২৬ জুলাই দুর্নীতির মামলায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের সাজার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে রায় পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ৩০ মে দুর্নীতি মামলায় টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

বিএনপির ওই তিন নেতার সবাই চিকিৎসার কথা বলে সিঙ্গাপুর গেছেন। ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়েও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে ইতোমধ্যেই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।

leave a reply