সাংস্কৃতিক চর্চা আর বিকাশের লক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাজেট কমে যাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, শিক্ষার্থীদের উদাসীনতাসহ নানা কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এসব সংগঠন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি নিবন্ধিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফার সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মাইম সোসাইটি, বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি জবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাব ইত্যাদি। এছাড়া অনিবন্ধিত সংগঠন রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদসহ আরও কয়েকটি।
তবে অর্থ সংকটে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পার করলেও নিজস্ব কোনও সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে ওঠেনি প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো সমৃদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের প্রয়াস থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তেমন কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এদিকে, গত কয়েক বছরে বাজেট হ্রাস পেয়েছে হুহু করে। ফলে সংগঠনগুলোর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ও সদস্য অনুপাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ কম হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
এ বছরে ইউজিসির কাছে ৬২ লাখ প্রস্তাব করলে তা গ্রহণ হয়নি বলে জানান অর্থ ও হিসাব দফতর পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের যেটা চাহিদা থাকে সে অনুযায়ী বাজেট পাই না। ফলে সবদিকেই তুলনামূলকভাবে কম কম থাকে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি তামজিদা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাঙালির সকল উৎসব উদযাপন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ধারার সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উল্লেখ্যযোগ্য নাম। কিন্তু আমরা সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছি আমাদের পর্যাপ্ত বাজেট না থাকার কারণে।
তিনি বলেন, আমরা যে অনুষ্ঠানগুলো করে থাকি এর মধ্যে রয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনে নবীন আগমনী উৎসব নতুনের গান অমর একুশের স্মরণে একুশের আহবান, একুশের গান, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার বাংলাদেশ। বাঙালির অস্তিত্বে থাকা ঋতুগুলো বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে বরণ করে নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এসব অনুষ্ঠান পরিচালনা থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে আমাদের বাজেটবৃদ্ধি প্রয়োজন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, মূলধারার পাঠ্যক্রমের সাথে সহশিক্ষা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক আগ্রহ সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাংস্কৃতিক চর্চার সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর নানান খাতে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর বাজেট কমিয়ে আনছে। যা মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশে অন্তরায়। আমরা পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাই না। এতে করে যে কোনও প্রোগ্রাম করতে গেলে আমাদের অনেকবার ভাবতে হয়।
এ নিয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।