জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নূরে জান্নাত নামের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
সোমবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুন্নাহার বেগম হলের ২৩৪ নম্বর রুমে ভুক্তভোগী জাকিয়া সুলতানা জয়াকে নির্যাতন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ফিশারিজ বিভাগের বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নূরে জান্নাত ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জয়াকে দেখা করতে বলেন। এরপর গত রোববার (২ এপ্রিল) দুপুর দুটা ৫০ জয়া মিনিটে হলে প্রবেশ করেন। হলে প্রবেশের পর ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এ্যানির মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জয়াকে সিএসই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদরকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় আদর সোমবার (৩ এপ্রিল) জয়া ও এ্যানিকে নিয়ে হলের ২৩৪ নম্বর রুমে গিয়ে নূরে জান্নাতের সাথে দেখা করার পর ক্লাসে যেতে বলেন।
সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জয়া ও এ্যানি হলে যান। সেখানে তাকে আবার আগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন জান্নাত। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়। জান্নাত জয়াকে এ্যানির সামনে ১০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। জান্নাতের সহপাঠী ও রুমমেট নওশিনও এসময় সাথে ছিলেন।
এক পর্যায়ে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রায় ৪৫ মিনিট অবচেতন অবস্থায় রুমে পড়েন থাকেন জয়া। এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যার পর জয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি কর হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন জয়া।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর জয়া বলেন, আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে আমি সে বিষয়ে কিছুই জানতাম না। কেন আমাকে হলে নিয়ে এরকম মানসিক নির্যাতন করা হলো তা আমি জানিনা। আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেখানে। এ বিষয়ে আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়বার না ঘটে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নূরে জান্নাত জানান, ‘আমি এ বিষয়ে জানিনা। অযথা একটা বিষয় নিয়ে শুধু শুধু আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা নিয়ে যদি বাড়াবাড়ি করা হয় তাহলে আমি অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
সিএসই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদরের নামও আছে অভিযোগপত্রে। মুহূর্ত নিউজকে আদর বলেন, ‘যা বলার আমি প্রক্টর স্যারের কাছে বলেছি। এ বিষয়ে আমি আর এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
নুরুন্নাহার বেগম হলের প্রভোস্ট ড. ফরহাদ আলী এ বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।