৩১ বছর ছয় মাস সাত দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারের হিসেব মতে, তিন দশকে ২৬ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন। যদিও শাহজাহান ভূঁইয়ার দাবি, তিনি নিজ হাতে ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই জঙ্গি।
হত্যা ও অস্ত্র মামলায় ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল তার। এরপর ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়। সাজা থেকে ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন ক্ষমা পেয়েছেন তিনি। ৭৩ বছর বয়সে রোববার বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেলেন জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া।
দেশের আলোচিত এই জল্লাদকে রোববার বেলা পৌনে ১২টায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাগার থেকে তাকে হাসি মুখে বের হতে দেখা যায়। বের হওয়ার সময় তার আশপাশে প্রায় ১০-১৫ জন কারারক্ষী ছিলেন।
বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শাহজাহান। এরপর তার কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৩০ বছর অনেক সময়। এতদিন জেল খাটার পর এখন আর কোনও অপরাধ করতে চাই না। আর এখন আমার সক্ষমতা নেই অপরাধ করার।’
জল্লাদের দায়িত্ব পালন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিচার প্রক্রিয়া শেষে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলাম। তাই কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কোনও না কোনও কাজ করতে হয়। আমি একটু সাহসী ছিলাম বলে আমাকে জল্লাদের কাজে নিয়োগ করা হয়। এসব ফাঁসি আমার সিদ্ধান্তে আমি দেইনি, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দিয়েছি।’
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শাহাজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। আমার এক বোন আছে। তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে। সে আমাকে কোনও দিন দেখতেও আসেনি।’
শাহজাহান আরও বলেন, ‘আমার কোনও বাড়িঘর নেই। আমি বসুন্ধরার নর্দ্দা এলাকায় একজনের বাসায় যাচ্ছি। কারাগারে থাকার সময় তার সাথে পরিচয় হয়েছিল।’
তিনি বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তিনি যেন আমাকে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। যাতে বাকি জীবন আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারি।
তার বের হওয়ার আগে ঢাকা কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জল্লাদ শাহজাহান এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। এতে প্রতি ফাঁসির জন্য তার দুই মাস করে শাস্তি মওকুফ হয়েছে। এছাড়া জেলে কেউ ভালো কাজ না করলে, কারও শাস্তি মওকুফ করা হয় না। তবে শাহজাহান জেলে থাকা অবস্থায় ভালো কাজ করে দশ বছর পাঁচ মাস সাজা কমিয়েছেন।
শাহজাহানকে মুক্তি দেয়ার আগে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শাহজাহান ভূঁইয়া। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র আইনের মামলা। দুটি মামলায় ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে কারাগারে আছেন তিনি। দুই মামলায় তার সাজা হয়েছিল ৪২ বছর।
মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। যদিও শাজাহান দাবি করেছেন, তিনি ৬০ জনের ফাঁস দিয়েছেন।
জেলার মাহবুবুল আরও বলেন, ৪২ বছরের সাজার মধ্যে প্রতিটি ফাঁসির জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ এবং অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন।
শাহজাহানের কাছে টাকা পয়সা না থাকায় তার ১০ হাজার টাকার যে অর্থদণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে।