দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের প্রিয়মুখ তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না ক্রীড়ামোদিরা। তার সতীর্থ ও সাবেক খেলোয়াড়েরাও তামিমের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন। বলছেন, বিষয়টাতে তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে। সিদ্ধান্তটা সময় হওয়ার আগেই নিয়ে ফেললেন ড্যাশিং ওপেনার। তামিমের ঘোষণাটা যে অভিমান ও কষ্ট থেকে এসেছে সেটি এতক্ষণে সবার অনুমানে।
দেশের ক্রীড়ামোদিরা এখনো নিজেদের প্রত্যাশা জিইয়ে রেখেছেন। তারাও চাইছেন তামিম আরেকবার ভেবে দেখুক, নিজের সিদ্ধান্ত বদলাক। আবার ফিরে আসুক বাইশ গজে, ফিরে ঝড় তুলুক।
ক্রীড়াসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিসিবির ডাকে এখনও পর্যন্ত সাড়া না দেওয়া তামিমকে আটকাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান তামিমকে ডেকেছেন।
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সতীর্থ সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তামিম ইকবাল। শুক্রবার বিকাল ৪ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা গণভবনে অবস্থান করছেন।
শুক্রবার সকালেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন তামিম। এরপর দুপুরে মাশরাফির সঙ্গে তিনি গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে কষ্ট পেয়েছেন তামিম। কোচ হাথুরুর সঙ্গেও কিছুটা দূরত্ব চলছিল। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ফিটনেস নিয়ে পাপনের বক্তব্যে অপমানিত বোধ করেছেন তামিম।
এ কারণে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তামিম নিজেও নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, বোর্ড সভাপতির বক্তব্যে তার মনে হয়েছে দলে হয়তো এখন আর সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রয়োজন নেই।
বোর্ডও বুঝতে পেরেছে, অভিমান থেকেই ওয়ানডে অধিনায়ক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই তো তামিমকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে বোর্ড। কাল রাতে ঢাকায় বোর্ড পরিচালকদের এক জরুরি সভার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সকাল (কাল) থেকে ওকে চেষ্টা করেছি, পাচ্ছি না। ভাই নাফিস ইকবালের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই তাকে পাইনি। আমার সঙ্গে এখন অবধি যোগাযোগ হয়নি। আমি নাফিসের কাছে একটা মেসেজ পাঠাই, ওর সংবাদ সম্মেলনের পর। আমি বলেছি আমি চাই তামিম অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজ শেষ করুক। এরপর আমরা বসে ঠিক করব কী করা যায়। তার মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের এমন করা ঠিক হচ্ছে না। তার দলে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আর এরপর থেকেই বিসিবি তামিমের সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা করছে। কিন্তু তামিম এখন পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এর মধ্যেই তাকে ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে তামিমকে আরেকবার ভেবে দেখতে বলবেন। সেক্ষেত্রে তামিম সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন-এমন অনুমান করছেন তার ভক্তরা।
গতকাল তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণার পর থেকেই রাতারাতি পাল্টে গেছে দেশের চিত্র। রীতিমতো ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোাযোগমাধ্যমে প্রতিটি ওয়ালে ওয়ালে করা পোস্টগুলিই বলে দিচ্ছে, নিজেদেরকেও সমব্যথী করেছেন তামিম ভক্তরা। সিরিজের মাঝপথে তার আকস্মিক ক্রিকেট ছাড়ার বিষয়টি যেন কেউ মেনে নিতে পারেননি।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে তামিম কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সবসময়ই একটা কথা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য। আমি জানি না তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি এই ১৬ বছরে।’
তামিমের অবসর প্রসঙ্গে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা লাইভে তার সিদ্ধান্ত শুনেছি। তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। এটা শকিং নিউজ, খুবই প্রি-ম্যাচুউর সিদ্ধান্ত। সে আরও অন্তত দুই বছর খেলতে পারত। বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’