বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা চার মিনিটে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তাই ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের অপেক্ষা এখন সেই সময়ের জন্য। শুধু ভারতীয়ই নয় বিশ্ববাসীর অনেকেরই নজর থাকবে আজকে ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর দিকে।
আজকেই চাঁদের মাটিতে পাখির পালকের মতো ভেসে ভেসে অবতরণ করবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। তার মাধ্যমেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে চলেছে ভারত। সফলভাবে অবতরণ সম্পন্ন হলে ভারতই হবে প্রথম দেশ যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে পেরেছে।
ইসরো জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে। বিক্রমের গতিবিধির দিকে অনবরত নজর রাখা হয়েছে। সঠিক সময়েই বিক্রম অবতরণ করতে চলেছে বলে আশাবাদী ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ল্যান্ডার বিক্রম আগেই মূল মহাকাশযানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সেটি চাঁদের মাটি থেকে ২৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ভাসছে। বুধবার ধাপে ধাপে ল্যান্ডারের উচ্চতা কমানো হবে। তার সাথে ভারসাম্য অনুযায়ী কমবে বিক্রমের গতিও। বর্তমান অবস্থান থেকে চাঁদের বুকে পা রাখতে বিক্রমের ১৫ মিনিট সময় লাগবে।
যেভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামবে বিক্রমঃ
প্রথম ধাপে বিক্রমকে সাত দশমিক চার কিলোমিটার উচ্চতায় নামিয়ে আনা হবে। এই সময়ে ল্যান্ডারের গতি থাকবে সেকেন্ডে ৩৫৮ মিটার। এতে সময় লাগবে সাড়ে ১১ মিনিট।
এরপর চাঁদ থেকে ছয় দশমিক আট কিলোমিটার উচ্চতায় নামানো হবে। এই ধাপে বিক্রমের গতি আরও কমিয়ে আনা হবে। তখন তার গতি হবে সেকেন্ডে ৩৩৬ মিটার।
পরের ধাপে চাঁদ থেকে বিক্রমের উচ্চতা কমে হবে ৮০০ মিটার। তখন তার গতি আরও কিছুটা কমানো হবে। এই পর্যায়ে লেজার রশ্মির ব্যবহার করবে ল্যান্ডার।
চাঁদের মাটিতে লেজার রশ্মি ফেলে সেন্সরের মাধ্যমে অবতরণের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজবে বিক্রম। তারপর ধীরে ধীরে উচ্চতা আরও কমানো হবে।
৮০০ থেকে ১৫০ মিটার উচ্চতায় নামার পথে বিক্রমের গতি থাকবে সেকেন্ডে ৬০ মিটার। তার পর ১৫০ থেকে ৬০ মিটারে নামার সময়ে এই গতি হবে ৪০ মিটার প্রতি সেকেন্ড।
৬০ থেকে ১০ মিটারে নামতে গিয়ে বিক্রমের গতি থাকবে ১০ মিটার প্রতি সেকেন্ড। এরপর চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করবে ল্যান্ডারটি। শেষ মূহূর্তে তার গতি হবে সেকেন্ডে ১.৬৮ মিটার।
অবতরণের এই শেষ পর্যায়টিই সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চার বছর আগে ঠিক এখানে এসেই আটকে যায় ভারতের চাঁদে নামার স্বপ্ন। ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। এবার অবশ্য সব রকম সম্ভবনার কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরো। বিশেষ সেন্সর বসানো হয়েছে বিক্রমে। রয়েছে প্রচুর ক্যামেরা। ইসরোর দাবি, সেন্সরগুলি কাজ করা বন্ধ করে দিলেও বিক্রম চাঁদে নামবে। সে ভাবেই ল্যান্ডারটিকে তৈরি করা হয়েছে। তাই এখন শুধু অপেক্ষা প্রহর গুণতে হবে।