নিউক্লিয়ার মেডিসিনে সহজলভ্য হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা

বহির্বিশ্বের অনুসরণে বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেবার ব্যবহার বাড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন রোগীদের বিদেশ গিয়ে চিকিৎসার প্রবণতা কমাবে। চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত আধুনিক পদ্ধতি নিউক্লিয়ার মেডিসিন। বিজ্ঞানীদের ভাষায় যাকে বলা হয় মলিকুলার ইমাজিন। কারণ পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শরীরের যেকোন সূক্ষ্ম পরিবর্তন যেমন নির্ণয় করা সম্ভব, তেমন নিরাময়ও করা যায়। হাড়, রক্ত, হরমোন, চোখ, কিডনীসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও কোষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা যেকোন সূক্ষ্ম ও জটিল রোগকে সহজেই নির্ণয় করা যেতে পারে মলিকুলার ইমাজিনের মাধ্যমে।

১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে এ দেশের পরমাণু চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালাইভ সায়েন্সসহ (নিনমাস) জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজে ১৬টি পরমাণু চিকিৎসা ইনস্টিটিউট রয়েছে। নির্মাণাধীন আরও আটটির কাজ শেষের পথে।

অত‍্যাধুনিক এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে নিনমাস পরিচালক এবং পেট সিটি স্ক্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামীম মমতাজ ফেরদৌসি বেগম বলেন, নিউক্লিয়ার মেডিসিন ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্ক্যান করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রোগীর শরীর স্ক্যান করে আমরা বলে দিতে পারি, হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন ঠিক আছে কি না। থাইরয়েড গ্লান্ড কোনো কারণে রোগাক্রান্ত হলে, আমরা সেটা নির্ণয় করতে পারি। পেট সিটি স্ক্যান করে করে আমরা বলে দিতে পারি শরীরের কোথায় ক্যানসার, কোন পর্যায়ে আছে। ক্যানসার চিকিৎসা দেওয়ার পর, চিকিৎসা কার্যকর হল কিনা, সেটাও জানতে পারি। এটি ক্যানসার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বের মতই নিউক্লিয়ার মেডিসিনে বাংলাদেশও উন্নত মানের সেবা দিতে পারবে বলে আশাবাদী তিনি।

সম্প্রতি দেশের ৫টি নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউটে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে ঢাকার বাইরে কম খরচে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত হবে। মোট ২১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের (আইএনএমএএস) আধুনিকায়ন করা হবে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ২০২৫ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করবে।

চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি একনেকে পাশ হয়। ফলে, ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনসাম) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার জন্য কিছু নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা এবং রোগীর সেবাকার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সম্ভব হবে। দেশের উল্লেখিত জেলাগুলোর দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে সর্বশেষ এবং উন্নত পারমাণবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও ভূমি আপিল বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম। তিনি জানান, প্রকল্পটি রোগীর সেবাকার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।

এসব জেলার দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম খরচে সর্বশেষ এবং উন্নত পারমানবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউটগুলোর রোগ নির্ণয়ে সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং রোগীর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং পারমাণবিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পথ সুগম হবে। যা পরোক্ষভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

(প্রতিবেদনটি বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপের আওতায় তৈরি)

leave a reply