হলের শিক্ষার্থীরা বকেয়া রেখেছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ অবস্থায় বকেয়া রেখে নিঃস্ব হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তারা মিয়াকে।
ডাইনিংয়ের সবকিছু গুছিয়ে খাবারের তালিকা লেখার বোর্ডে ‘আজ থেকে বিদায়, মো. তারা মিয়া’ লিখে বিদায় নিয়েছেন তিনি। বকেয়া টাকা ফেরত পাবার আশায় বোর্ডের উপরে লিখে গেছেন নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর। বকেয়া রাখা ব্যক্তিরা যোগাযোগ করে টাকা পরিশোধ করেন।
তারা মিয়া বলেন, ‘আমার একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল ডাইনিং পরিচালনা। এটার ওপরই নির্ভর করেই পরিবার চালাতাম। হঠাৎ করে এভাবে চলে যেতে হবে ভাবতে পারিনি। ২০২১ থেকে ২০২২ সালেই প্রায় ১০ লাখ টাকার খাবার বাকি খেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে প্রায় ছয় লাখ টাকার মতো বকেয়ার হিসাব খাতায় লিখিত রয়েছে। আর বাকি টাকার হিসাব মৌখিকভাবে কিংবা বিভিন্ন প্যাডে লিখে রেখেছি। এর আগে ২০১০ সালেও এক বছর পরিচালনা করেছি। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে হঠাৎ করে আমাকে ডাইনিং ছাড়তে বলা হলো। আমার নয় লাখ ৮০ হাজার টাকা সবমিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো বাকি রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এই টাকা আমি কীভাবে পাব? বিভিন্ন সময়ে অনেকজন একসঙ্গে এসে খাবার খেত। টাকা চাইলে বলতো নেতা দিবে। কিন্তু সেই টাকা আজও পাইনি।’
তিনি আরও জানান, ‘ডাইনিং পরিচালনা শুরু করার সময় কোনও চুক্তিপত্র দেওয়া হয়নি। পরে হল অফিসে বারবার চুক্তিপত্র চাইলেও আমাকে দিবে দিবে বলে আর দেয়নি। এখন হঠাৎ করে আমাকে ডাইনিং ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাকিব তাকে চলে যেতে বলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিবের কাছে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ নাকচ করেন। বলেন, ‘চুক্তিপত্র ছাড়া সে কীভাবে ডাইনিং পরিচালনা করে। আর চুক্তিপত্র দিবে হল প্রশাসন, আমি দেওয়ার কেউ না। যেহেতু তার চুক্তিপত্রই নেই সেহেতু তার এরকম অভিযোগ দেওয়ারও কোনও সুযোগ নেই। এরকম অভিযোগ না করে সামনাসামনি এসে বলুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে সমাধান করব। হল প্রশাসন যদি তাকে চুক্তিপত্র ছাড়াই থাকতে দেয়। সেক্ষেত্রে এখানে আমরা কে কথা বলার? আর মৌখিকভাবে এত টাকা কীভাবে হয়? সে কার কার কাছে টাকা পায় সামনাসামনি এসে বলুক। আর আমি হলেই থাকি না তাহলে আমি তাকে হল ছাড়তে বাধ্য করব কীভাবে?’
ডাইনিং পরিচালক তারা মিয়ার বিদায়ের ব্যাপারে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, ‘আমার আগের যিনি হল প্রভোস্ট ছিলেন তার সময়ে ডাইনিং পরিচালক নিয়োগ হয়। তার সঙ্গেই চুক্তি হওয়ার কথা। আমার সময়ে হলে আমি দিতাম। যেহেতু আমার সময়ে হয়নি তাহলে আমি তো চুক্তিপত্র দিতে পারি না। আর তারা মিয়া এত দিন ছিল বলে আমি তাকে থাকতে দিয়েছি। আমার কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু তার অনেক টাকা বাকি পড়ার কারণে তিনি থাকতে পারছেন না। হল প্রশাসন রাখতে চাইলেও বাস্তবতার নিরিখে তিনি থাকতে পারেননি। এক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারব না। নতুন যারা এসেছে তারা কাগজে-কলমে লিখিত ডকুমেন্ট পাবেন।’