তরুণ তুর্কীদের কাঁধে চড়ে টাইগারদের আফগান বধ

ওয়ানডেতে শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিতি পেলেও, টি-টোয়েন্টিতে পায়ের নিচের মাটি এখনো পোক্ত হয়নি বাংলাদেশের। তার ওপর সেই ওয়ানডেতেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। ফলে ২০১৪ সালের পর একই বছরে ঘরের মাঠে একাধিক সিরিজ হারের স্বাদ পেয়েছে স্বাগতিকরা। সে তুলনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগানরা বেশ সমীহ জাগানিয়া দলই। তাই পা হড়কানোর ভয় তো ছিলই খানিকটা। তবে তীরে এসে এবার তরী ডোবায়নি সাকিব আল হাসানের দল। দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে শুক্রবার আফগানিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্তটির আগে অবশ্য নাটক কম হলো না। জয় যখন একদম মুঠোয়, তখনই তা প্রায় ফসকে যাচ্ছিল। ৫ বলে যখন প্রয়োজন স্রেফ ২ রান, টানা তিন ব্যাটসম্যানের আত্মঘাতী শটে হ্যাটট্রিক করে বসেন করিম জানাত। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভূত ফিরে আসার উপক্রম হয়। তবে শরিফুল ইসলামের চারে গর্জন ওঠে গ্যালারিতে।

জয়সূচক শটটি শরিফুলের ব্যাট থেকে এলেও বাংলাদেশের রান তাড়ার মূল নায়ক হৃদয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে দলের বড় ভরসা হয়ে ওঠা তরুণ ব্যাটসম্যান এবার ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেললেন টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া জুটিতে তার সঙ্গী শামীম। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই ব্যাটসম্যান!

১৫৫ রান তাড়ায় যখন একাদশ ওভারে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তখনও জয় থেকে অনেকদূরে বাংলাদেশ। কিন্তু হৃদয় আর শামীমের ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

২৫ বলে ৩৩ রান করে বিদায় নিলেও, ম্যাচ ছিলো নিয়ন্ত্রণেই। ৬ বলে ৬ রানের সমীকরণে প্রথম বলটিই বাউন্ডারিতে পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু দ্বিতীয় বলে মিরাজের উইকেটের পর জানাতের হ্যাটট্রিকে যখন অভাবনীয় কিছু আশায় উড়ছেন আফগানরা, হৃদয় ভাঙার শঙ্কায় তখন স্তব্ধ গোটা গ্যালারি।

তবে এরপর আর পা হড়কায়নি। হৃদয় অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৪৭ রান করে। 

শেষের ওই নাটকীয়তার আগে বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটাও ছিল বাজে। প্রথম ওভারেই ফজল হক ফারুকির বল রনি তালুকদারের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উড়িয়ে দেয় অফ স্টাম্প।

পরের সময়টায় দ্রুত রান তুলতে ব্যর্থ হন লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনেই ফিরেছেন বাজেভাবে আউট হয়ে। সাকিবের বিদায়ে চাপ আরো বাড়ে। সেখান থেকেই হৃদয় ও শামীমের সেই জুটি।

টস হেরে আগে ব্যাট করে আফগানিস্তান অবশ্য তাদের প্রত্যাশিত স্কোরই পেয়েছিল। টসের সময় আফগান অধিনায়ক রশিদ খান বলেছিলেন, দেড়শ রানের আশেপাশে চোখ তাদের। সেটি তারা করতে পারে।

যদিও শুরুটা তারা ভালো করতে পারেননি তারাও। নাসুম আহমেদকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারার পরের বলেই বিদায় নেন হজরতউল্লাহ জাজাই। তাসকিন আহমদকে পুল করে ছক্কায় উড়িয়ে পরে তার বলেই ফেরেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।

দুই ওপেনারকে অনুসরণ করেন ইব্রাহিম জাদরানও। তিনে নামা ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান শরিফুল ইসলামকে ছক্কা মারার পরের বলে। এই নিয়ে পাঁচবারের দেখায় প্রতিবারই ইব্রাহিমকে আউট করলেন এই বাঁহাতি পেসার।

পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তান তোলে ৩ উইকেটে ৪০ রান। একটু পর করিম জানাতকে ফিরিয়ে আফগানদের আরও চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান।

নবির লড়াই অবশ্য ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তিনটি বাউন্ডারি মারেন তিনি শরিফুলকে। পরে মনোযোগ দেন ইনিংস গড়ে তোলায়। নাজিবউল্লাহ জাদরানের সঙ্গে তার ৩৫ রানের জুটিতে সরে যায় চাপ।

২৩ রান করা নাজিবউল্লাহকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে আফগানিস্তান ততক্ষণে ঝড় তোলার ভিত পেয়ে গেছে।

ষোড়শ ওভারে একশ পেরোয় আফগানরা। পরের ৪ ওভারে উত্তাল হয়ে ওঠে নবি ও আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের ব্যাট। তাসকিনকে গ্রিন গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন নবি, চোখধাঁধানো র‌্যাম্প শটে ছক্কায় ওড়ান ওমারজাই।

পরে মুস্তাফিজের স্লোয়ারকে সীমানা ছাড়া করেন ওমারজাই। পার পাননি এমনকি সাকিবও। প্রথম ৩ ওভারে স্রেফ ১৩ রান দেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়কের শেষ ওভারে টানা দুটি ছক্কা মরেন ওমারজাই। ১৮ বলে ৩৩ করে ওই ওভারেই তিনি বিদায় নেন তাসকিনের দারুণ ক্যাচে।

শেষ ওভারে পূর্ণ হয় নবির ফিফটি। টি-টোয়েন্টি পঞ্চাশের স্বাদ পেলেন তিনি ৩৪ ইনিংস পর। সবশেষটি করছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষেই, ২০১৯ সালে ৫৪ বলে অপরাজিত ৮৪। এবার তিনি অপরাজিত থাকেন ৪০ বলে ৫৪ রানে।

শেষ ৪ ওভারে রান আসে ৫৩। আফগানদের রান পৌঁছে যায় দেড়শ ছাড়ানোর প্রত্যাশিত সীমানায়। কিন্তু জয়ের আশা তাদের পূরণ হয়নি। শেরে নাটকীয়তার পর বাংলাদেশের জয়ে সিলেটের দর্শকদের উল্লাস চলতে থাকে ম্যাচ শেষের অনেক পরও।

leave a reply