সৌদি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও এখনো মেলেনি ন্যায়বিচার। জামাল খাসোগিকে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
খাসোগি দূতাবাসে গিয়েছিলেন তার বাগদত্তার সাথে পরিকল্পিত বিবাহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য।
পরে ওই ভবন থেকে বের হওয়ার কোনও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়েছিল যে দূতাবাসের মধ্যেই জামাল খাসোগিকে গুপ্তহত্যা করা হয় এবং তার দেহকে টুকরো টুকরো করে কেটে বা অন্য উপায়ে তার চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। তার হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
অভিযোগের আঙুল ওঠে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। তবে তার সংশ্লিষ্টতা কোনোভাবেই প্রমাণ করা যায়নি এখনো।
সৌদি মানবাধিকার কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের দেশের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও সাবধানী হতে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রিডম ইনিশিয়েটিভের সৌদি পরিচালক আব্দুল্লাহ আলাউধ বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন সরকারকে সৌদি আরবের সাথে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু মানবাধিকার বা মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে কোনও দেশ যখন একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী সরকারগুলোর সঙ্গে কাজ করে, তখন সে দেশের নিজস্ব যে কৌশল বা মানবাধিকারের ধারণা, তা ভূলুণ্ঠিত হয়।
আপনি যখন নিরাপত্তার খাতিরে স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দেন, তখন কোনটাই টেকে না।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আলকিস্ট ফর হিউম্যান রাইটসের লিনা-আল-হাতলুল বলেন, ‘আপনি সৌদির তেল কিনতে পারেন, একইসঙ্গে তাদের দেশে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনাও করতে পারেন।’
আল-হাতলুল তার বোনের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তার বোন লুজাইন বহু বছর ধরে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সৌদি আরবের নারী গাড়ি চালকদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এ লড়াই করতে গিয়ে তাকে তিন বছর জেল খাটতে হয়েছে। এখন তিনি জেলের বাইরে থাকলেও সৌদি আরব ত্যাগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গত এক মাসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সবকিছু কেমন করে স্বাভাবিক হতে পারে বা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি, গ্রিসের সঙ্গে বৈদ্যুতিক গ্রিডের সংযোগ, সৌদি আরবে মার্কিন ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান লুসিডের প্রথম কারখানা স্থাপন ইত্যাদি।
অথচ পাঁচ বছর আগেও খবরের শিরোনামগুলো ছিল ভিন্ন। যেমন ওয়াশিংটন পোস্টের খবর ছিল- ‘সিআইএ বলছে, খাসোগি হত্যার পিছনে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের হাত।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খবর ছিল, ‘খাসোগি হত্যা: সৌদি আরবে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের গোমর ফাঁস।’
অধিকারকর্মীরা পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশে বলছেন, আপনি হয়তো সৌদি আরবকে হারাতে চান না, কিন্তু আসলে আপনারা সবাইকে হারাচ্ছেন। কারণ আপনারা বিশ্বের কাছে এবং প্রত্যেক স্বৈরাচারীর কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছন যে- যার হাতে যতক্ষণ তেলসম্পদ রয়েছে, ততক্ষণ সে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেয়ে যেতে পারবে।