জাবিতে সাংবাদিক মারধর, অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি ছাত্র ইউনিয়নের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত  সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের পরিপন্থি ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫(ঞ) ও ৫(থ) ধারা দুটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান হৃদয় স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনকে মারধর এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ক্ষুব্ধ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন। একই সাথে গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধ করতে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।’

যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমতিয়াজ অর্ণব ও সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘ক্ষমতার দাপটে এবং প্রশাসনিক পক্ষপাতদুষ্টতার ফলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের মহাশক্তিধর মনে করতে শুরু করেছেন। এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুরো দেশ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ব্যাপী ক্রমাগত নানান কুকীর্তি করে পার পেয়ে যাওয়ার ফল এই ঘটনা। একজন সাংবাদিকের যে স্বাধীনতা ও পেশাগত কাজের সুযোগ থাকা দরকার, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মোটেই আগ্রহী নয়। সাংবাদিকতায় যুক্ত একজন শিক্ষার্থীকে যদি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এমন হামলার শিকার হতে হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি কেমন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে “পলিটিক্যাল গেস্টরুম” চলাকালীন ভিডিও ধারণ করছে সন্দেহে এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় হলের অভ্যন্তরের দোকানে অবস্থানরত সাংবাদিক আসিফ আল মামুন উচ্চশব্দ শুনে হল মাঠের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় ধাওয়াকারীরা শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আসিফ আল মামুনের চশমা ভেঙে যায় এবং শার্ট ও জুতা ছিঁড়ে যায়। এসময় তারা সাংবাদিককে মারতে পেরেছে বলে গর্ব ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। অতীতে এমন আরেকটি ঘটনার ব্যাপারেও আমরা অবগত আছি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অভিযুক্তদের বাঁচাতে কোনরকম অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়, তবে এর পরিণাম ভালো হবে না। গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের ডেকে নির্যাতনের ঘটনা ছাত্রলীগের নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিণত হয়েছে। এই জঘন্য সংস্কৃতির অবসানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে প্রশাসন বরাবরই অনাগ্রহী। কাজেই সাংবাদিক মারধর ও লাঞ্ছনার দায় প্রশাসন কোনভাবেই এড়াতে পারে না।’

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করুক। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ সংশোধন করে সেটিতে ৫(ঞ) ও ৫(খ) ধারা দুটি যুক্ত করার মধ্যদিয়ে। প্রশাসনের কর্তাদের দুর্নীতির খবরাখবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্থার শিকার হওয়ার ঘটনাও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ঘটতে দেখেছি।’

তারা আরও বলেন, অবিলম্বে সাংবাদিককে মারধরকারী ছাত্রলীগকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি করা ও ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশের বিতর্কিত ৫(ঞ) ও ৫ (থ) ধারা দুটি বাতিল করতে হবে। এবং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া কিংবা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অভিযুক্তদের লঘু শাস্তি প্রদানের কোনও পাঁয়তারা দৃশ্যমান হলে ছাত্র ইউনিয়ন তার সমুচিত জবাব দিবে বলেও জানান নেতৃবৃন্দ।

এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের অতিথি কক্ষে র‍াজনীতিক আলোচনা চলাকালে বাইরে থেকে ভিডিও করছিল এমন সন্দেহে ভুক্তভোগীকে মারধর করা হয়।

মারধরের শিকার আসিফ আল মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যয়নরত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধাক্ষ্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটিতে প্রধান হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু হলের ওয়ার্ডেন অধ্যাপক মোঃ এজহারুল ইসলাম। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন হলের ওয়ার্ডেন পলাশ সাহা এবং সহকারী আবাসিক শিক্ষক আ জ ম উমর ফরুক সিদ্দিকী।

leave a reply