জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট নিরসন ও গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্তি জন্য অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দশতলা বিশিষ্ট নতুন ছয়টি হল নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে দু’টি হল গত ৩০ জানুয়ারিতে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে চার মাস না পেরুতেই নিয়ম না মেনে ছেলেদের ২১ নং হলে গোপনে গণরুম চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি জানেন না ওই হলের প্রাধ্যক্ষ মো. তাজউদ্দীন সিকদারসহ হলের দায়িত্বরত অন্যান্য শিক্ষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হলের চতুর্থ তলার ৪২২ ও ৪২৩ নম্বর কক্ষ নিয়ে গণরুম চালু করা হয়েছে। কক্ষের চৌকিগুলো সরিয়ে মেঝেতে তোষক দিয়ে শয্যা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কক্ষ দু’টিতে চারজন করে আটজনের আসন বরাদ্দ রয়েছে। তবে সেখানে ১৪ জন করে মোট ২৮ জনকে রাখা হয়েছে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন দু’টি হল উদ্বোধন করা হয়। হলগুলোতে ৪৬তম ব্যাচ (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) থেকে ৫০তম ব্যাচের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫১তম ব্যাচের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণরুম চালু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, হলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছাত্রলীগ নেতারা গণরুম চালু করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উঠিয়েছেন। গণরুমে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোতে অবস্থান করছিলেন। দ্রুত আসন ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিতে ৫০তম ব্যাচের সিনিয়ররা তাদের এই হলে উঠিয়েছেন।’
তবে ৫০তম ব্যাচের সিনিয়রদের নাম জানতে চাইলে তারা কেউই কিছু বলতে রাজি হননি।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জোবায়েদ আশিক ও শেখ রাজুর নির্দেশে গণরুম চালু করা হয়েছে। তারা দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এছাড়া তারা ২১ নম্বর হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জোবায়েদ আশিক বলেন, ‘বিষয়টি পুরো জানি না। তবে যতদূর শুনেছি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নিজে থেকে এসেই থাকছে। আমি পুরো ঘটনা জেনে জানাব।’
শেখ রাজু বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা এখনও শুনিনি। সুতারাং গণরুম চালুর সাথে আমার জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়।’
হল ওয়ার্ডেনের দায়িত্বে থাকা অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রনি হোসাইন বলেন, আমি মাত্র শুনলাম। যেহেতু জানতে পারলাম আমরা কক্ষগুলো পরিদর্শনে যাব। যদি এ ধরনের কাজ হয়ে থাকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক মো. তাজউদ্দীন সিকদার বলেন, ‘এ বিষয়টি জানতাম না। পরে কয়েকজন সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি খোঁজ নিতে শিক্ষকদের পাঠিয়েছিলাম। তবে যতদূর জেনেছি, তারা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আসেনি।’
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় জানান, প্রশাসনের অবহেলা এবং ছাত্রলীগের প্রতি সফট কর্নারের প্রতিফলন নতুন হলের গণরুম। আমরা ২০১৮ সাল থেকে শুনে আসছি নতুন হলগুলো হলে গণরুম থাকবে না। সেইখানে কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি করে গণরুম করছে ছাত্রলীগ। উন্নয়ন যখন কেবলমাত্র বুলি আর অব্যবস্থাপনার শিকার হয় তখন আমাদের এইটা বুঝা লাগবে প্রশাসন তার কাজ যথাযথভাবে করছে না। প্রভোস্ট মহোদয়ের প্রতি দাবি, আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নতুন হলের গণরুম তুলে দিতে হবে। না দিতে পারলে আমরা আমাদের মতো করে কর্মসূচি দেব।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার একান্ত সচিব বলেন স্যার মিটিং এ আছেন।