বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতার মধ্যেই আজ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক্সপো সিটিতে শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮। কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায় সে লক্ষ্যে নানা ইস্যুতে মিলিত হচ্ছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের শুরুর দিনই লস এন্ড ড্যামেজ বা ক্ষতিপূরণ তহবিলের বিষয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন হয়েছে।
দুবাই সম্মেলনের প্রথম দিনে লস এন্ড ড্যামেজের আওতায় ৪২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা করে বিশ্বের ৫ রাষ্ট্র। এর মধ্যে জার্মানি ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড, যুক্তরাষ্ট্র ১৭.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার, জাপান ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত ১০০ মিলিয়ন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার দেয়ার ঘোষণা দেয়। তবে কবে নাগাদ তা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতেই কপের বিদায়ী সভাপতি স্মরণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত জলবায়ু বিশেষজ্ঞ প্রয়াত অধ্যাপক সালিমুল হককে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কপ-২৮ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট সুলতান আহমেদ আল জাবির। ধনী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সমস্যা অনুধাবন করতে পারছেন বলে দাবী করেন তিনি।
এবারের জলবায়ু সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে ২০২৩ সালই এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে ঊষ্ণ বছর। বৈশ্বিক জলবায়ু ভেঙে পড়ার বাস্তব চিত্র চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি আমরা।
১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো সম্মেলনের এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে জলবায়ুগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়। আগামী ৩ ডিসেম্বর সম্মেলনের আলোচনায় এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এই সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে। সেগুলি হলো: জ্বালানি ব্যবহার স্থানান্তর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে ৬০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত রুখতে কাজ করা, জলবায়ু অর্থায়ন (তহবিল) বাড়ানো ও জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, উদ্বোধনী দিনে লস এন্ড ড্যামেজকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রফেসর সালিমুল হক স্যারকে স্মরণ করার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের পুরো পদক্ষেপটি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে লড়াই চলছে, তার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবারের মতো এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববাসীর।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এতদিন কম গুরুত্ব পেয়ে আসছিলো। এবারের সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম হলো বাংলাদেশ, সে অনুযায়ী এ দেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। সে দিক বিবেচনায় লস এন্ড ড্যাসেজের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
সম্মেলনে যোগ দেয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর গ্লোবাল এসেসমেন্ট করার বিষয় উল্লেখ ছিল। এ বছর সেই এসেসমেন্ট হচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী, কী প্রয়োজন ও কত সাপোর্ট এসেছে ও ঘাটতি কত আছে তা জানা যাবে। এসব বিষয় নিয়ে এবারের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও একজন উপদেষ্টা কাজ করছেন। আশা করছি, যেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে তা থেকে আমাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, এবারের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যা জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে অনুযায়ী এ সম্মলনের ফলাফল জোরদার হওয়া নিয়ে শুরু থেকেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন,পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা।