গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঋণ খেলাপির জামিনদার হয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতা হারিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। যদিও দলের বহিস্কারাদেশ কাটিয়ে পুনরায় মেয়র হওয়ার আশায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল বলে ঘোষণা করেন।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। এদিকে, গতবারের বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর কৌশলে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচন কমিশন জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে।
এই বাস্তবতায় জাহাঙ্গীরকে কে নিয়ে কী ভাবছে আওয়ামী লীগ, আর তার মা জায়েদা খাতুনকে নিয়েই বা কী ভাবছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটারেরা, নেপথ্য এবং প্রকাশ্যে জাহাঙ্গীর তার মায়ের ভোটের দাবিতে আওয়ামী লীগে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? ভোট ভাগাভাগি হবে কিনা এসব জানার চেষ্টা করেছে মূহূর্ত নিউজ৷
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের নেতৃবৃন্ধ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হয়েছে।
এই বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, জাহাঙ্গীরের বিষয় নিয়ে কিংবা তার মাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবছে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। ভোটের মাধ্যমে আমরা জয়লাভ করতে চাই। কেউ কোন প্রকার সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস করে কেউ যেন বৈতরণি পার না হতে পারে তার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য গাজীপুরের প্রতিটি থানা ভিত্তিক, ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করা হবে এবং অধিকাংশ হয়েছে। আগামী ৯ তারিখের আগেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে জানান এই নেতা।
আওয়ামী লীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল বলেন, একটা হীন চরিত্রের স্বার্থপর মানুষকে নিয়ে কথা বলার সময় আছে কি আমাদের? কে সে? কী তার ভূমিকা দলের জন্য? সে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অমান্য করার দু:সাহস দেখিয়েছে। তার মতো লোকের কোন দরকার নাই আর আওয়ামী লীগে।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, আজকের বৈঠকে মূলত জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে চিরতরে বহিস্কারের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি গাজীপুরের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সোচ্চার ছিলেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেলও উপস্থিত ছিলেন। তারাও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানান জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের ব্যাপারে।
কেন জাহাঙ্গীরকে বারবার ক্ষমা করে তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একধিক নেতা জানান, তাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা অর্থ এই নয় যে সে খুব গুরুত্বপূর্ণ দলের জন্য। আমাদের দলের একটা গঠনতন্ত্র আছে, এতে দলের সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষমা করার ব্যাপারটি আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটা রাজনৈতিক দল, অনেক নেতাকর্মী, আর যেহেতু আমরা একই পরিবারের সদস্য কেউ ভুল করলে, ক্ষমার যোগ্য হলে, খুব বেশি ক্ষতির কারণ না হলে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কেউ যদি বারবার একই ভুল করে তাকে বারবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে এমনটি নয়।
জাহাঙ্গীরের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, তার মাকে বাধা দেয়া হবেনা বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন করে। সচারাচর যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয়ের ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব এটাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরেক নেতা জানান, দলের প্রতি যদি তার নূন্যতম ভক্তি শ্রদ্ধা থাকত, নেত্রীর প্রতি যদি শ্রদ্ধা থাকত তাহলে সে নিজে মনোনয়ন কেনার সাহস পেতো না। আজকে দলের প্রতি তার কোন কমিটমেন্ট নেই, আগেও ছিলনা। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছিল। ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের জন্য তার মাকে দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করাবে। এমন মানুষ আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা হতে পারে না। আমরা আমাদের দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করে যাব। তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর।