খুলে দেয়া হয়েছে গজলডোবা বাঁধ, পানিবন্দী উত্তরের লাখো মানুষ

তিস্তা গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত। যার ফলে উজান থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে ধেয়ে আসছে পানি। পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলো। বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। এতে রংপুর অঞ্চলের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসা উজানের ফলেই হঠাৎই নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর ফলে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকেরা। পানিতে তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। কোথাও কোথাও হাঁটু পানিতে ডুবে আছে ঘর-বাড়িসহ উঠতি ফসল। সময়ে সাথে পাল্টা দিয়ে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ওপরে উঠানামা করছে।

শনিবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা তিনটায় বিপৎসীমার নিচে এসে আসে। একই সময়ে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পাউবো। পরে দুপুরে কাউনিয়া পয়েন্টের পানি বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফ্ল্যাড অথরিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল দশটায় গজলডোবা ব্যারেজ পয়েন্ট থেকে প্রায় লাখ কিউসেক পানি একসঙ্গে ভাটির দিকে ছেড়েছে। সব মিলিয়ে শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ১ হাজার ৬৪৭ কিউসেক এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৮ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে ছেড়েছে ভারত।

এদিকে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা কয়কদিনের গরমের পর টানা বৃষ্টি শুরু হয়। এতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়ে যায়। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সঙ্গে কিছু কিছু প্লাবিত নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

নদীপাড়ের মানুষেরা বলছেন, গেল দুদিন ধরে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। নীলফামারীর ডিমলার ছাতনা এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এই সব এলাকার পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়েছে। বড় বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তিস্তাপাড়ের মানুষজন।

রংপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, নোহালী ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম রয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার ধুসমারার চর, আজম খাঁ চর, হাইবত খাঁ গোনাই, পল্লীমারী, চর একতা, চর মিলনবাজার, গোপীকাল্লা, ডালার চর ও চর গোদাই। এ ছাড়া পীরগাছার ছাওয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুড়া, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় দেখা দিয়েছে তিস্তা নদী ভাঙন। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধরলার অববাহিকার মোগলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

leave a reply