কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ছাত্র সংসদের ভেতরে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যাওয়ার পথে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মাঝে নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে কলেজ প্রাঙ্গনে যাওয়ার পর একই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
এ হামলায় দুই গ্রুপের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। তন্মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পক্ষের আবদুর রহমান, মিঠু, সানবির মাহমুদ ফয়সাল, মো. রাকিব ও বাপ্পী আহত হয়েছেন। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের রবিন, ইমন, সুহাস ,শাহেদ, আশিক, মাছুম, সাকলাইন ও আনোয়ার আহত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক গণযোগাযোগ বিষয়ক উপ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির অনুসারী সানভির মাহমুদ ফয়সাল বলেন, শান্তি সমাবেশে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। ক্যাম্পাসে এসে দুই পক্ষের মাঝে আবার বাকবিতন্ডা হয়। পরবর্তীতে শাহেদ, আনোয়ার, সাকলাইন, মাছুম, আশিক, আশরাফ এদের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জন আমাদের উপর হামলা করে। হামলার এক পর্যায়ে তারা সংসদে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে।
অপরদিকে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী রাফি উজ সাকলাইন বলেন, আমি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাগরের অনুসারীরা উল্টো নিজেরাই নিজেদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। সাগর নিজেই বহিরাগত। ওর নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ থেকে বহিরাগতরা এসে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমার উপরেও হামলা হয়েছে। সানবির, হৃদয় মিয়া, আব্দুর রহমান, রাকিব, সুমন, পলাশ, মারুফ এরা সহ আরো ৩০/৪০ বহিরাগত আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা ছিলাম মাত্র ৮/১০। ওরা আমাদের লোকদের মেরে রক্তাক্ত করেছে। সাবেক সহ-সভাপতি ইমরান হোসেন বাবু লুঙ্গি পরে কোমরে পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাসে আমাদের হুমকি দিতে এসেছিল।
হামলার বিষয়ে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার বলেন, ঝামেলার সময় আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। বিষয়টি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সমাবেশের সময় যে ঘটনা ঘটেছে তা সেখানেই মিমাংসা করা হয়েছে। আবার ক্যাম্পাসে এসে যে বা যারাই সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছিল আমরা সিসি টিভির ফুটেজ দেখে তাদের নাম কেন্দ্রে পাঠাবো। ছাত্রলীগের অভিভাবক সাদ্দাম ভাই এবং ইনান ভাই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেন।
কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর বলেন, ঘটনার সময় আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। পরবর্তীতে এসে জানতে পেরেছি। বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছে তারা কখনো ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারে না। তারা পিঠ বাঁচানোর জন্য ছাত্রলীগ করছে এবং সুযোগ বুঝে সংগঠনের ভিতরে ঝামেলা সৃষ্টি করছে। যে বা যারাই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একজন কর্মী জানান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর মাঝে ফুটপাতের দোকানের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বও রয়েছে। যা নিয়ে মাঝে মধ্যেই মারামারিতে জড়ায় তারা। বিষয়টি আমাদের মত সাধারণ কর্মীদের জন্য অনেক বিব্রতকর।
এ প্রসঙ্গে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক সাধারণ শিক্ষার্থী মুহূর্ত নিউজকে জানান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করি। এতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ দিনকে দিন নষ্ট হচ্ছে, সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষালাভের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।
দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।