ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম ঊর্মিকে (২৩) গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্বশুরবাড়ি থেকে জানালায় ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার দীর্ঘ নয় মাস অতিবাহিত হলেও যথোপযুক্ত বিচার না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন তার পরিবারের সদস্য, সহপাঠী ও শিক্ষকরা। এসময় ঊর্মির দুই বছর বয়সী শিশু আবনাব প্রত্যয়কেও সাথে এনেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
রোববার (২১ মে) ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন থেকে বিচারের দাবিতে র্যালি বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ম্যুরাল সামনে মানববন্ধনে সমবেত হয়। মানববন্ধনে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় বক্তারা বলেন, আমরা ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীর নিশাত তাসনিম ঊর্মির হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে উপস্থিত হয়েছি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের সাথে আজকে নিশাত তাসনিমের ফুটফুটে শিশু প্রত্যয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে এর সামনে দাঁড়িয়ে তার মায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে আমাদের সাথে শামিল হয়েছে। আমরা মনে করি এ দাবিতে ঊর্মির সন্তান প্রত্যয় আমাদের শক্তি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, যারা বিবাদী তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তারা জামিনে বেরিয়ে এসেছে এবং এই বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য মামলার নানাবিধ প্রমাণ যা ছিল সব নষ্ট করার জন্য পাঁয়তারা করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো বিচারিক প্রক্রিয়ায় একটা হত্যাকাণ্ডের যে সমস্ত আলামত ছিল তা দেখে হত্যামামলা নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশের দেওয়া রিপোর্টের সাথে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কোনো মিল নাই।
তারা বলেন, আদালত নিশাত ঊর্মির হত্যা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এটাও জানতে পেরেছি পিবিআই বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে প্রাথমিক ঘটনার বিবরণে সাথে মেডিকেল বোর্ডের ময়নাতদন্তের কোনো মিল নাই। ময়নাতদন্তের যা প্রতিবেদনের সাথে পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদনে মিল নাই। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার এই যেখানে হত্যাকাণ্ডের মামলা নেয়া হয়েছে সেই জায়গায় পুলিশ কী করে একটা ইউডি মামলা প্রতিবেদন দাখিল করে এবং বাদীকে একটা আত্মহত্যা মামলা হিসেবে আর্জি দেওয়ার জন্য কী করে চাপ প্রয়োগ করে।
বক্তারা দাবি জানান, ঊর্মির হত্যার সাথে যারা জড়িত তার স্বামী প্রিন্স’সহ তার শুশুর, শাশুড়ী এবং পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে আর নয়, আমরা ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাই। আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাই।
তারা আরও বলেন, আমরা অবিচারের দৃষ্টান্ত দেখতে চাইনা। কোনো নিশাত ঊর্মি এভাবে হত্যার শিকার যেন না হয়, বিচারের আশায় কারো পরিবারকে নিভৃতে যেন কাঁদতে না হয়। ক্ষমতার জোরে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন বদলে দেয়া হয়েছে। ডাক্তারের মেডিক্যালের প্রতিবেদন বদলে গেছে। আমরা জানি ন্যায়বিচার সবচেয়ে শক্তিশালী। সত্য যখন প্রকাশিত তখন দ্বিগুণ শক্তিতে উদ্ভাসিত হয়। তখন এই টাকার শক্তি, পেশির শক্তি, টেকসই হবে না। ন্যায়বিচারের কাছে এসকল অপশক্তি পরাজিত হবে।
মানববন্ধন থেকে নিশাত উর্মির মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা মানুষের মত মানুষ হবে অথচ অকালে মেয়েটা ঝরে গেছে। তার খুনের বিচারের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। ছাত্রসমাজের কাছে আমার নিবেদন তারা আমার মেয়ে হারানোর যন্ত্রনাকে নিজেদের যন্ত্রনা মনে করুক এবং আমার সাথে বিচারের দাবিতে তারা রাস্তায় নামুক। সবাই যেন একসঙ্গে একই সাথে আমার সন্তানের হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে পারে এই জন্য আমার এখানে আসা।’
নিহত ঊর্মির পিতা জানান, পুলিশ প্রতিবেদন মোতাবেক আমার মেয়েকে আট সেপ্টেম্বর রাতে আনুমানিক রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। রাত ১০ থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্য এ পরিবারের কোনো মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে না। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতেই আমার মেয়ে মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশি রিপোর্টে বলা আছে তার গলায় আঙ্গুলের কালো ছাপ বিদ্যামান, গালে ঊর্মির স্বামী প্রিন্সের আংটির দাগও আছে। তারপর হাসপাতালে থেকে পুলিশ যখন সুরতহাল রিপোর্ট করে তখনও পরিস্কার করে হত্যার কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময় ময়নাতদন্তের পরে সেখানে বলা হয়েছে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি। আদালতে এর বিরুদ্ধে না রাজি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলাম। পরবর্তীতে পিবিআই এর তদন্ত করছে।
এ প্রসঙ্গে গাংনী থানার ওসি মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের সার্থে পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পিবিআই জোনের পুলিশ সুপার মো: শহীদ আবু সরোয়ার বলেন, মামলাটি আমরা সম্প্রতি হাতে পেয়েছি। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে আমরা মামলাটি তদন্ত করব।