ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে হল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে হল প্রশাসন।

সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো: শামসুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এরপর সানজিদা চৌধুরী অন্তরা (পরিসংখ্যান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮), হালিমা আক্তার ঊর্মি (চারুকলা বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), ইসরাত জাহান মিম (আইন বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), তাবাসসুম ইসলাম (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), মুয়াবিয়া জাহানের (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

তাদেরকে আগামী পহেলা মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে অন্তরাসহ যাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হল সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ বারাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে হালিমা আক্তার উর্মির বিবৃতিতে উল্লিখিত তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার অধিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। রাত ১২টা থেকে আনুমানিক রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দোয়েল-১ রুমে নির্যাতন করা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে বের করে ডাইনিং রুমে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিবস্ত্র করার নির্যাতন এবং শরীরে আলপিন ফুটানোর বিষয়টিও উঠে এসেছে। এছাড়াও যে ভিডিও করেছে সে দাবি করেছে তার মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে। মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য প্রক্টর বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করার কারণেই একটু সময় লেগেছে। পুরো ঘটনার সারসংক্ষেপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও সংযুক্ত রয়েছে। কোথায় কোন কোন ঘটনাগুলো ঘটেছে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, আমরা গতকালকেই কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেই প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। তদন্তের গোপনীয়তার স্বার্থে কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কি না সেটা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, অন্তরা আমাদের সহ-সভাপতি কিন্তু বাকি কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই চিনি না। তারা কেউ আমাদের শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়।

সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, তদন্ত কমিটির কাছ থেকে আমরা যে প্রতিবেদন পেয়েছি তা গতকাল কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। ছাত্রলীগ তার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টা পায়নি এমন কথা বলা যাবে না। আমরা প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠিয়েছি সিদ্ধান্ত তারাই নিবেন।

এ বিষয়ে হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহসানুল হক বলেন, আমরা হল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল সন্ধ্যায় জমা দিয়েছি। আজকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সত্যতা পেয়েছে। সত্যতার আলোকে পাঁচ অভিযুক্তের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। এই হলের সাথে তারা কোনও সংশ্লিষ্টটা থাকবে না এই সুপারিশ করা হয়েছে। হল তদন্ত কমিটি পাঁচজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে যে ফুলপরীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করেছে।

উপ-উপাচার্য বলেন, উপাচার্য মহোদয় আসলে আমরা বসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বিষয়ক যে আইন কানুন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের কোনও সদস্যকে অসম্মান করা বা লাঞ্ছিত করা কখনই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধিবিধান আছে সেটা পর্যালোচনা করেই প্রতিপালন করা হবে। নিয়মশৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমিও চাই সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।

leave a reply