ইউজিসিকে পাত্তা না দিয়ে ফের বেরোবি’র রেজিস্ট্রার হচ্ছেন আলমগীর!

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নিষেধাজ্ঞার পরও ফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী। গেল এক বছর চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালনকালে তিনি শর্ত ভঙ্গ করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বোনাস গ্রহণ করেছিলেন। এ বিষয়ে ২০২১ সাকের ২৯ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছিল। পরে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হন।

আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে তাকে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য রোরবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের ৯২তম সভা আহ্বান করা হয়েছে।

বেরোবির সাবেক উপাচার্যদের দায়িত্ব পালনকালে রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় সার্চ কমিটি গঠন করে নিয়োগ দেয়া হলেও বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্রার এর শূণ্য পদে নিয়োগের কোন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে সিন্ডিকেটের ৮২তম সভায় কয়েকজন সদস্যের আপত্তির মুখে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। এর মাধ্যমে উপাচার্যের আর্শীবাদপুষ্ট চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন শিক্ষকের আত্মীয় হবার সুবাদে আট বছর আগে অবসরে যাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীকে ৮৪তম সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন উপাচার্য প্রফেসর হাবিবুর রশীদ।

নিয়োগপত্র অনুযায়ী তিনি ২০২২ সালের ছয় ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদেন। সে সময় সার্চ কমিটি শুধু একজনের নামই প্রস্তাব করেছিল এবং সিন্ডিকেট তাকেই নিয়োগ দেয়।

প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার পরিচয় দিলেও তিনি মূলত সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন এবং স্বল্প সময়ের জন্য রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

এদিকে ইউজিসি’র ২০২২ সালের ২০ মার্চ জারি করা নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে আইনে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক পদে পূর্ণকালীন নিয়োগ প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব, চুক্তিভিত্তিক বা খন্ডকালীন হিসেবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী/সামরিক কর্মকর্তা বা কলেজের শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। প্রতিষ্ঠাকাল ১০ বছর হয়েছে এমন সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে এ সকল পদে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে অবিলম্বে নিয়োগ প্রদান করে মঞ্জুরী কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।

কিন্তু বেরোবি প্রশাসন এই নির্দেশনা না মানায় পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ জুন আবার দেয়া তাগিদপত্রে রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ছয় মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক পূর্ণকালীন নিয়োগ প্রদান করে মঞ্জুরী কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছিল।

এদিকে,  রোববার বর্তমান রেজিস্ট্রারের মেয়াদ আজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুন কাউকে নিয়োগের জন্য কোন প্রক্রিয়া গ্রহণ করেনি বেরোবি কর্তৃপক্ষ। বরং ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আবারও প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এটি করা হলে কমিশনের নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে জানিয়েছে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এভাবে যদি গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় এবং কোন মাধ্যমে যদি ইউজিসি অবগত হয় তাহলে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে শনিবার যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর হাসিবুর রশীদ জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। বক্তব্য নেয়ার জন্য মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, ‘সব ব্যাপারে আমি বক্তব্য দিতে পারি না।’

leave a reply