দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রা এ দুটি একইসূত্রে গাঁথা। প্রতিটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করবে তা নির্ভর করে আয়, আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যের ওপর। ভোগ্যপণ্যের মূল্য যখন ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন মানুষের মধ্যে থাকে এক ধরনের স্বস্তি।
অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন তাদের জীবনে ধীরে ধীরে নেমে আসে নানা ধরনের অসুবিধা ও অশান্তি।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নিম্নমধ্যবিত্ত। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ দিন আনে দিন খায়। এমতাবস্থায় নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির ফলে এসব মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের মূল্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় দ্রব্যমূল্যের সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের অনেক মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ছে। মানুষ এখন মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারছে না। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। অনেকে তিন বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
একসময় শোনা যেত বাংলার সমৃদ্ধির কথা। গোলাভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল। বিখ্যাত শাসক শায়েস্তা খানের আমলে এক টাকায় পাওয়া যেত আট মণ চাল। বাংলার মানুষের ছিল না খাদ্যের অভাব। তারা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করত।
সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির হার; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অধিক মূল্যবৃদ্ধি যেন এদেশের মানুষের কাছে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাপন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। বর্তমানে প্রতি কেজি চালের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের চাল কেনাও হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে, দেশে মাথাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক টাকা যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে তারা মাসে যে উপার্জন করে তার বেশির ভাগই ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। এই খাদ্যের বেশির ভাগই চাল। প্রধান খাদ্যশস্যটির মূল্যস্ফীতির বোঝাও তাদের ঘাড়ে চাপে বেশি। কিছু সুবিধাবাদী মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে গরিব অসহায় মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত চালসহ অন্যান্য মালামাল তারা সম্পূর্ণ পরিমাণ নিতে পারছে না। নিত্যদিনে রান্না করার প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে তেল, পেঁয়াজ, সবজি, চাল, ডাল, চিনি, লাকড়ি ইত্যাদি ও নানা ধরনের শাকসবজি ব্যবহৃত হয়। উক্ত শাকসবজিগুলোর দামও লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে।
দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হলো আটা। মানুষের খাদ্য তালিকায় ভাতের পর রুটি থাকে, যা আটা বা গম দিয়ে তৈরি। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আটা ও গমের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দেড় বছর আগে এক কেজি আটার মূল্য ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা কিন্ত বর্তমানে সমপরিমাণ আটা কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ২৩ থেকে ২৫ টাকা।
মাছে ভাতে বাঙালি হিসেবে বিশ্বে আমাদের খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মাছের অত্যধিক মূল্যের কারণে দেশের অধিকাংশ সাধারণ জনগণের মাছ কেনার সামর্থ্য নেই।
শিক্ষাপণ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, এক বছরে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এছাড়া নিউজপ্রিন্টের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণ। ফলে শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহের মূল্য দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে একই অবস্থা। ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম সবকিছুরই মূল্য সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জ্বালানির ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ফলে যানবাহনের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাবে বাস, ট্রাক, নৌযান ও জ্বালানিচালিত যানবাহনের ভাড়াও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উপাদান জ্বালানি তেল। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।এর ফলে লোডশেডিংয়ের হার বাড়ছে এবং বিদ্যুতের ইউনিটের মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই অবস্থায় সরকারকে নিত্যপণ্যের মূল্য জনগণের আওতার মধ্যে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানুষের আয় বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। টিসিবির পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিশ্চিতকরণে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি রোধ করা অতীব জরুরি। নতুবা এদেশের মানুষের পক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জীবন যাপন করা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।
মোছা: দোলনা আক্তার, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
9 Comments
u4on5d
Wow, fantastic blog format! How lengthy have you ever been blogging for?
you made blogging glance easy. The whole look of your website is excellent, as smartly as the content!
You can see similar here e-commerce
Do you mind if I quote a few of your posts as long as I provide credit and sources back to your
blog? My website is in the exact same niche as yours and my users
would genuinely benefit from a lot of the information you provide here.
Please let me know if this ok with you. Many thanks!
I saw similar here: Sklep
Hi, just wanted to tell you, I loved this post.
It was inspiring. Keep on posting! I saw similar here: Najlepszy sklep
Howdy! Do you know if they make any plugins to assist
with Search Engine Optimization? I’m trying to get
my blog to rank for some targeted keywords but I’m not seeing very good results.
If you know of any please share. Kudos! You can read
similar blog here: Najlepszy sklep
Hi! Do you know if they make any plugins to help with Search Engine Optimization? I’m trying to get my blog to rank for
some targeted keywords but I’m not seeing very good results.
If you know of any please share. Kudos! You can read similar blog here: Dobry sklep
Hey there! Do you know if they make any plugins to assist with Search
Engine Optimization? I’m trying to get my blog to rank for some targeted keywords but I’m not seeing very good gains.
If you know of any please share. Thanks! You can read similar text here:
List of Backlinks
a4wc5i
sxqlax